নতুন জঙ্গি দল ‘হামজা ব্রিগেড’, অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ৪

চট্টগ্রামে পাঁচটি রাইফেল ও পাঁচটি পিস্তলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব বলছে, ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ নামে নতুন একটি জঙ্গি দল দাঁড় করাচ্ছিল এই ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোউত্তম সেনগুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2015, 02:29 PM
Updated : 13 April 2015, 03:01 PM

রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বন্দর নগরীর তিনটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাব-৭ এর প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- মোজাহের হোসেন (৩৫), সাব্বির আহমেদ ওরফে মুহিবকে (২৩),কামাল উদ্দিন ওরফে মোস্তফা (২৪) ও আশরাফ আলী ওরফে আদনান (২৫)।

তাদের দেওয়া তথ্যে উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচটি একে-২২ রাইফেল, পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, একটি বন্দুক, পিস্তলের পাঁচটি ম্যাগজিন, একে-২২ রাইফেলের ১০টি ম্যাগজিন, তিন হাজার রাউন্ড পয়েন্ট ২২ বোরের গুলি, ১২ রাউন্ড সেভেন পয়েন্ট ৬৫ পিস্তলের গুলি, ৫০১ রাউন্ড শটগানের গুলি।

রোববার রাতে নগরীর স্টেশন রোডের হোটেল মিডটাউন থেকে মোজাহের ও মুহিবকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাব জানিয়েছে। তাদের কাছে চারটি বিদেশি পিস্তলসহ এক হাজার রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, গ্রেপ্তার মোজাহের অস্ত্র ব্যবসায়ী। জঙ্গি সংগঠন হামজা ব্রিগেডের সদস্য মুহিব তার কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে গিয়েছিলেন।

তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঢাকায় পালানোর সময় নগরীর এ কে খান গেইটে একটি বাস কাউন্টার থেকে হামজা ব্রিগেডের মোস্তফা ও আদনানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর তাদের দেওয়া তথ্যে পাঁচলাইশ থানার কসমোপলিটন আবাসিক এলাকার মাসুদ রানা ওরফে ফাহাদ নামে এক ব্যক্তির বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি একে-২২ রাইফেলসহ অন্য অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। 

সম্প্রতি বাঁশখালীতে সন্ধান পাওয়া জঙ্গি আস্তানার সঙ্গে নতুন এই জঙ্গি দলের যোগসূত্র রয়েছে বলে দাবি র‌্যাব কর্মকর্তাদের।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা বলেন, “কওমী মাদ্রাসা ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের উচ্চাভিলাষী কিছু সদস্য মিলে ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ করা হয়েছে। মূলত চট্টগ্রামের বাইরের লোকজনদের তারা দলে নেয়।”

২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে বৈঠক করে এই দলটির নাম ঠিক হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “সংগঠনটি পুরো সক্রিয় হওয়ার আগেই তাদের ধরা গেছে।”

র‌্যাব বলছে, নতুন জঙ্গি সংগঠনটির অধিকাংশই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থী।

 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা বলেন, সংগঠনটিতে গ্রিন, ব্লু ও হোয়াইট নামে তিনটি অংশ রয়েছে। এর দুই অংশের প্রধান মো. মাসুদ ওরফে ডন এবং মো. আজিজ ওরফে তারেক নামে দুজন আগেই আটক হন।

তার দাবি, গত ১২ এপ্রিল হাটহাজারী আবু বকর মাদ্রাসা, ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালী লটমনি পাহাড় ও ২৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর হালিশহর এলাকা থেকে এবং রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত নগরী থেকে গ্রেপ্তার ২৪ জনের সবাই হামজা ব্রিগেডের সদস্য।

পাঁচলাইশের ওই বাসায় অস্ত্র ‍ও গুলি উদ্ধারের পাশাপাশি অস্ত্র চালানোসহ প্রশিক্ষণের বিভিন্ন কাগজপত্রও পেয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব কর্মকর্তা মিফতা বলেন, হাটহাজারী আবু বকর মাদ্রাসাটিতে তাত্ত্বিক এবং বাঁশখালীতে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।

“গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, বাঁশখালীতে প্রশিক্ষণার্থীদের ছয় রাউন্ড একে-২২ এবং চার রাউন্ড পিস্তলেরসহ মোট ১০ রাউন্ড করে গুলি চালাতে দেওয়া হত।”

৫ ব্যাংক হিসাবের সন্ধান

‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ নামে সংগঠনটির গ্রেপ্তার সদস্যদের কাছ থেকে পাঁচটি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা বলেন, “এসব অ্যাকাউন্ট নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছি। তবে নির্দিষ্ট কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে তাদের কাছে টাকা আসত না। হুন্ডির মাধ্যমে আসা নগদ টাকা তারা ব্যাংকে রাখত।”

তাদের কাছে কারা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাত, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন বাইরে থেকে অর্থ পাচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলে আসছে।

রাইফেলগুলো চীনের

র‌্যাব কর্মকর্তা মিফতা জানান, চীনে তৈরি একে-২২ রাইফেলগুলো বাংলাদেশের কোনো বাহিনী ব্যবহার করে না।

“জিজ্ঞাসাবাদে মোজাহের জানিয়েছে, ভারতের মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে একে-২২ রাইফেলগুলো চায়না থেকে আনা হয়েছে।”

দুই লাখ ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় একে-২২ রাইফেলগুলো কিনে তিন লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন বলে র‌্যাবকে জানিয়েছেন মোজাহের।

পিস্তলগুলো এক লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা কিনে এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হত বলে র‌্যাব জানিয়েছে।