গুলির প্রশিক্ষণের জন্য একে-২২ রাইফেল, রিভলবার, পিস্তল ও বন্দুক রাখা ছিল সেখানে; সামরিক কায়দায় গড়ে তোলা হয়েছিল ফায়ারিং জোন।
বাঁশখালীর সাধানপুর ইউনিয়নের লটমণি পাহাড়ে গরু-মুরগির খামারের আড়ালে এই আস্তানা গড়ে তোলা হয়েছে বলে সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
জঙ্গি সন্দেহে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী থেকে গ্রেপ্তার ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে এই আস্তানার কথা জানা যায় বলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন।
অভিযানের পর রোববার দুপুরে ওই পাহাড়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার বিকাল থেকে পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে আসছেন তারা। এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনটি একে-২২ রাইফেল, একটি রিভলবার, ছয়টি পিস্তল ও দেশে তৈরি তিনটি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। ৭৫১ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গুলি, ছয়টি একে-২২ রাইফেলের, নয়টি পিস্তলের ম্যাগজিন, তিনটি চাপাতি, দুইটি ওয়াকিটকি ও ২৩ সেট প্রশিক্ষণ পোশাক পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- আমিনুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, হাবিবুর রহমান, আমির হোসেন ও মোবাশ্বের হোসেন। এদের সবার বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
সাধনপুরের মূল রাস্তা থেকে তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে আসতে হয় এই আস্তানায়।
২০১০ সালে পাহাড়টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আওতায় আসে বলে ইউপি চেয়ারম্যান ছমিরউদ্দিন জানান।
তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের ঝড়ের পর বাঁশখালীর ছনুয়া থেকে এসে এখানে বসতি গাড়েন মাওলানা মোবারক। মাওলানা আজিজ নামে আরেকজনকে নিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে ১২০ শতক জমি কিনে গরু, মুরগি ও ভেড়ার খামার করেছিলেন তিনি।
খামারের আড়ালে পাহাড়ের বিশাল এলাকায় আস্তানা গেড়ে সেখানে নিয়মিত ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণ’ দেওয়া হত বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা মাহমুদ।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন এলাকা থেকে দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের এনে প্রথমে তাদের আরবি ও ইসলামের বিভিন্ন বিষয় শেখানো হত। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর হামলার দৃশ্য দেখিয়ে ‘মুসলমানদের মুক্তির’ জন্য জঙ্গিবাদে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হত।
“ওসামা বিন লাদেন ও আইমান আল-জাওয়াহিরির মতো বিভিন্ন জঙ্গি নেতাদের বক্তব্য এবং জঙ্গিদের বিভিন্ন সফল অপারেশনের ভিডিওচিত্র তাদের দেখানো হত।”
সেখানে অস্ত্র চালনা ও গেরিলা প্রশিক্ষণ, এমনকি বিমান ছিনতাইয়েরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হত বলে জানান র্যাবের মুখপাত্র।
জায়গাটিতে খামার করার পর সেখানে স্থানীয় লোকদের ঢুকতে দেওয়া হত না। জায়গাটি জাল দিয়ে ঘিরে ঢোকার একটি পথ তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে থাকত পাহারা।
প্রায়ই রাতে সেখান থেকে গুলির মতো আওয়াজ পাওয়া যেত বলে স্থানীয়দের কয়েকজন জানিয়েছেন।
তারা বলেন, পাহাড়ি এলাকা এবং বন্য হাতির উৎপাত থাকায় হাতিকে ভয় দেখাতে পটকা ফোটানোর শব্দ মনে করতেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, “একসঙ্গে ১০ থেকে ১২ জনকে এই আস্তানায় এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। তাদের চোখ বেঁধে বিকল্প সাতকানিয়ার কাঞ্চনা-ছনখোলার রাস্তা দিয়ে এখানে আনা হত।”
মাওলানা মোবারক ছাড়া ওই এলাকায় অন্য কারও চলাফেরা চোখে পড়ত না বলে স্থানীয়রা জানান।
মোবারককেই এখনও ধরতে পারেননি বলে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন জানান, পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে মাটি খুঁড়ে ড্রামের ভেতর করে অস্ত্র ও পোশাকগুলো রাখা হয়েছিল। ছিল ফায়ারিং জোনও।
র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক এএসপি সোহেল মাহমুদ জানান, হাটহাজারীতে আটকের পর তারা জানিয়েছিল নতুন করে তারা সংগঠিত হচ্ছিল। এখনও পর্যন্ত তারা তাদের নাম ঠিক করেনি।