উৎকণ্ঠায় মন নেই পড়ায়, পরীক্ষার্থীদের চোখ খবরে

লাগাতার অবরোধের মধ্যে আবারও হরতাল আসছে কি না সেই উৎকণ্ঠায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2015, 09:29 AM
Updated : 3 Feb 2015, 11:07 AM

বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, তাদের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষার একদিন আগেও টেবিলে মন বসাতে পারছে না। বার বার তাদের নজর যাচ্ছে টেলিভিশনের খবর আর অনলাইন পত্রিকায়।

২ ফেব্রুয়ারি থেকে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর সূচি থাকলেও বিএনপি জোটের অবরোধের মধ্যে ৭২ ঘণ্টার হরতালের কারণে প্রথম দিনের পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে ৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার।

ফলে সূচি অনুযায়ী বুধবার এসএসসি ও সমমানের প্রথম পরীক্ষা হওয়ার কথা, যাতে অংশ নেবে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী।

অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা চললেও আবারও হরতাল দেওয়া হলে ওইদিনের পরীক্ষা পিছিয়ে যাবে বলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আগেই জানিয়েছেন।

বুধবার সকাল ৬টায় ৭২ ঘণ্টার হরতাল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর মেয়াদ বাড়ার সম্ভাবনা নিয়ে এরইমধ্যে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা বাড়ছেই।

রফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ছেলের পড়ায় মন নেই। মঙ্গলবার সকাল থেকেই মাঝে মধ্যে টিভি অন করে হরতাল আছে কি না সেই খবর নিচ্ছে। হাতে মোবাইলেও অনলাইন সংবাদপত্রে চোখ রাখছে। টেনশনে সে পড়তে পারছে না।”

এই অভিভাবক বলেন, হরতালে যদি বুধবারের পরীক্ষা না-ই হয় তাহলে পরের দিনের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। এ কারণে তার ছেলের চিন্তা এখন হরতালকে ঘিরে।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার এসএসসি শিক্ষার্থী আমির হোসেনের বাড়িতে কেবল টিভির সংযোগ না থাকায় হরতালের খবর জানতে তিনি মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ চালু করেছেন।

আমিরের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, “সামনে হরতাল আছে কি না তা নিয়ে ওর মাথা নষ্ট হওয়ার মত অবস্থা। কীভাবে যেন মোবাইলেই হরতালের খবর নিচ্ছে।”

আমির বলেন, “পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে সব এলোমেলো হয়ে যাবে। তখন পরের পরীক্ষার প্রিপারেশন। তাই ইন্টারনেটে পত্রিকা দেখছি, যাতে হরতালের খবর সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়।”

আরেক পরীক্ষার্থী ফৌজিয়া মাসুদের বাবা রানা মুহম্মদ মাসুদ বলেন, “পরীক্ষা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। পরীক্ষা হলেও কীভাবে কেন্দ্রে যাব সেই চিন্তায় আছি।”

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক মঙ্গলবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুধবার থেকে আবার হরতাল এলে পরীক্ষা হবে কি না- সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

বুধবার এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র, সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র; দাখিলে হাদিস শরিফ এবং এসএসসি ভোকেশনালে সকালে ইংরেজি-২ (১৯২২) এবং বিকালে ইংরেজি-২ (৮১২২) বিষয়ের পরীক্ষা নির্ধারিত আছে।

আর সোমবারের বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, সহজ বাংলা প্রথম পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্র; দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবীদ এবং এসএসসি ভোকেশনালে বাংলা-২ (১৯২১) সৃজনশীল এবং বাংলা-২ (৮১২১) পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে শুক্রবার।

বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালে ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।

ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়।