পুলিশকে হুমকি: ‘শাস্তিযোগ্য নন’ শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জের উপনির্বাচনে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রতিবেদনকে ‘অসম্পূর্ণ’ অভিহিত করে সাংসদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2014, 03:06 PM
Updated : 11 August 2014, 03:06 PM

সেইসঙ্গে তদন্ত কমিটির ‘ব্যর্থতার’ বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কিছু করার নেই বলে মনে করেন একাধিক নির্বাচন কমিশনার।

গত ২৬ জুন অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী ভাই সেলিম ওসমানের হয়ে কাজ না করায় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে পাশের আসনের সাংসদ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে।

গত ৯ জুলাই ওই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় বিচার বিভাগীয় কমিটি, যাতে শামীম ওসমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা বলে অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করা হয়। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এরইমধ্যে কমিশনে সুপারিশ জমা দিয়েছে ইসির আইন শাখা।

এ বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে সোমবার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদনে কারো বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়ার মতো মেটারিয়াল পাইনি আমরা। কমিটির সুনির্দিষ্ট কোনো সুপারিশ নেই। এখন আর এগুলোর কিছুই হবে না।”

ফাইল ছবি

অভিযোগের ‘সত্যতা’ পাওয়ার বিষয়টি ‘স্পষ্ট’ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। নতুন করে তদন্তেরও সুযোগ নেই বলে জানান মোবারক।

প্রতিবেদনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, “আমরা কমপ্লিট কোনো প্রতিবেদন হাতে পাইনি। এই অসম্পূর্ণ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব?”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একজন নির্বাচন কমিশনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গায়ে পড়ে কেন ব্যবস্থা নিতে যাব কারো বিরুদ্ধে? কমিটির কাছে কেউ তো এসে অভিযোগই করেনি। শুধু শুধু এ নিয়ে আর টানাটানি করবো না আমরা।”

তবে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ‘কোনো ব্যবস্থা না নেয়া গেলেও’ কেন্দ্র দখলে পরোক্ষ সমর্থন ও সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ায় দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করার প্রস্তাব কমিশনে উপস্থাপন করেছে ইসি সচিবালয়ের আইন শাখা।

পাশাপাশি তদন্ত কমিটির ‘ব্যর্থতার’ কারণে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতেও সুপারিশ করেছে তারা।

রোববার প্রতিবেদনটি সুপারিশসহ কমিশনে উপস্থাপন করা হয় বলে জানান ইসির আইন শাখার কর্মকর্তারা।

তদন্ত কমিটি প্রথমে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালামসহ চারজনকে অভিযুক্ত করলেও পরে সংশোধিত প্রতিবেদনে দুই কর্মকর্তার [সহকারী পুলিশ সুপার মো. বশির উদ্দিন ও র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর সোহেল] নাম বাদ দেয়া হয়।

ভোটের দিন সাংবাদিকদের কাছে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার অভিযোগ তোলেন পুলিশ কর্মকর্তা বশির।

ইসি সচিবের কাছে পাঠানো তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান নারায়ণগঞ্জের যুগ্ম জেলা জজ হাবিবা মণ্ডলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে অভিযুক্তদের বিষয়ে নিশ্চিত হতে অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন।

অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারে বলে সুপারিশও করে কমিটি।

গত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে শামীমের পাশাপাশি তার বড় ভাই নাসিম ওসমান লাঙল প্রতীকে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর তিন মাসের মাথায় তার মৃত্যু হলে আসনটি শূন্য হয়।

২৬ জুন ওই আসনে উপনির্বাচনে জয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যবসায়ী নেতা এ কে এম সেলিম ওসমান, যিনি শামীম ও নাসিমেরই ভাই।

ইসির আইন শাখার সুপারিশ

কমিশনকে দেয়া ইসির আইন শাখার পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্ত কমিটি বিলম্বে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে এবং মুদ্রনজনিত ত্রুটির কথা বলে সংশোধনীতে অভিযুক্ত দুই জনের নাম বাদ দেয়ার জন্য বিধিবহির্ভূত আবেদন করে।

“তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ইসির ওপর দিয়ে [শিফট] দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে কমিটি।”

গত ৩ জুলাই উপনির্বাচনের ফল গেজেটে প্রকাশ হলেও তার ছয় দিনের মাথায় প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। আর সংশোধনী দেয়া হয় তারও প্রায় দুই সপ্তাহ পর।

এ পর্যায়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত ও প্রাপ্ত তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না বলে মত দিয়েছে ইসির আইন শাখা।

তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী [৮১ এফ ধারা] ভোট কেন্দ্র বা ভোট কক্ষ দখল করার বিষয়ে সহায়তা বা পরোক্ষ সমর্থন বা সরকারি দায়িত্ব পালনে বল প্রয়োগের বাধা দেওয়ার জন্যে ফৌজদারী মামলা করা যেতে পারে বলে তাদের পর্যালোচনায় বলা হয়।

এছাড়া নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে কর্মরত কর্মকর্তা বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে দণ্ডবিধি ৩৫৩ অনুযায়ী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন বলে আইন শাখার সুপারিশে বলা হয়।