শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজিত এই আলোচনা সভায় অংশ নেন জাতীয় অধ্যাপক সালাউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।
তাদের সঙ্গে ছিলেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা নীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম আহ্বায়ক মুফতি মিজানুর রহমান সাইদ।
অধ্যাপক সালাউদ্দীন বলেন, “স্কুল ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষায় পরস্পরের মধ্যে আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। খোলামনে পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করতে হবে।”
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে, তারা জানে না মাদ্রাসা শিক্ষা কী? আবার যারা মাদ্রাসায় পড়ে, তারাও আধুনিক শিক্ষা সম্পর্কে জানে না। দুই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে হবে।
“মাদ্রাসা ও জেনারেল শিক্ষার একজন আরেকজনকে জানার সুযোগ তৈরি করতে হবে।”
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষা পাঠ্যক্রম প্রথম ১২ বছর সমন্বিত শিক্ষার মাধ্যমে শুরু করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “মাদ্রাসা আর স্কুল শিক্ষা আলাদা কেন হবে? দরকার কি? ১২ বছর পর্যন্ত সমন্বিত শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।”
আর ধর্মভিত্তিক শিক্ষা ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা রাজনৈতিক বিভাজনের মূল কারণ বলে মন্তব্য করেন জাতীয় অধ্যাপক সালাউদ্দীন আহমদ।
তিনি বলেন, “বৃটিশ আমলে কলকতায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় ধর্মের সাথে সম্পর্ক ছিলো না। আদালতের ভাষা ছিলো ফারসি। ওই ভাষা শিক্ষার জন্য মাদ্রাসার চালু করা হয়। ওই সময় আদালতে ফারসি, বাংলা, ইংরেজি চালু ছিলো।”
“বৃটিশ আমলে যদি আদালতের ভাষা বাংলা হতে পারে তবে এখন আমরা কেন পারবো না,” প্রশ্ন রাখেন অধ্যাপক সিরাজুল।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান মাদ্রাসার পাঠ্যসূচিতে সাধারণ বিষয়গুলো না থাকার সমালোচনা করে বলেন, “দেওবন্দ অর্থ্যাৎ উত্তর ভারতে মাতৃভাষা হিন্দি। সেখানে যদি মাতৃভাষায় শিক্ষা হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে যে বাংলা ভাষার শিক্ষার মাধ্যম হবে সেটা তারা (কওমি নীতিনির্ধারক) বুঝতে পারেনি।”
“গ্রিক দর্শনের বিষয় পড়াতে পারেন, দেওবন্দে প্লেটো-অ্যারিস্টটল পড়ানো হবে, কিন্তু হিউম, বার্কলে, হেগেল, কান্ট পড়ান না কেন?”
“আপনারা ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কথা বলছেন। আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন আর ব্যবসাকে হালাল করেছেন। তাহলে জানতে হবে সুদের সংজ্ঞাটা কী? ব্যবসার মধ্যে মুনাফার চরিত্র থাকে। এগুলো কার্ল মার্কস নামে একজন ইহুদী ব্যাখ্যা করেছেন। খাজনা-মুনাফা আর সুদ ব্যাখ্যা করেছেন। কার্ল মার্কসের ক্যাপিটাল কেন মাদ্রাসায় পড়ানো হবে না?”
‘তখন কোথায় ছিল হেফাজত’
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার পর হেফাজতে ইসলামসহ অন্যদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন রেখে সলিমুল্লাহ খান বলেন, “ধর্ম পালন করা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। সবদেশেই এটা আছে, এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। কই দেশের ১০০ স্থানে যখন সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হলো, তখন কেন প্রতিবাদ করলেন না।
“আমাদের কবি ফরহাদ মজহার, উনি কমিটি গঠন করলেন। এরাসব ভণ্ড। ভণ্ড দেশপ্রেমিক। হেফাজত আসলেন, এদের পানি দেন, অথচ এটা হিন্দু মন্দির ধ্বংসের প্রতিবাদ করলেন না। বেগম জিয়া সুদ্ধু।”
“এই যে অপব্যাখ্যা করলেন, নিশ্চয় আল্লাহ মিথ্যা ভাষণকারীকে পছন্দ করবেন না। দেশের কোন মসজিদে নামাজ পড়তে দেয়া হয়নি, সেটা বলেন,” বলেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে ‘হেফাজতে ইসলাম: কওমি শিক্ষা ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ শীর্ষক এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আর্টস এডিটর কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা।
অনুষ্ঠান শেষে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এই ধরনের আন্তরিক সংলাপ যদি দল এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঘটতো তাহলে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট ভিন্নরকম হতো।”