বিচারপতি অভিশংসনের ক্ষমতা চান তোফায়েল-সেলিম

উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসন করার জন্য ৭২ এর সংবিধান পুনর্প্রবর্তনের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংসদ তোফায়েল আহমদ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2012, 10:15 AM
Updated : 4 Sept 2012, 10:15 AM
ঢাকা, সেপ্টেম্বর ০৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসন করার জন্য ৭২ এর সংবিধান পুনর্প্রবর্তনের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংসদ তোফায়েল আহমদ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম। ।
মঙ্গলবার নবম জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দেওয়া বক্তব্যে তারা এ দাবি জানান।
তোফায়েল বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশের বাহাত্তরের সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা ছিল জাতীয় সংসদদের। তাই বাহাত্তরের সংবিধান ফিরিয়ে এনে বিচারকদের ইমপিচ করতে সংসদের এখতিয়ার ফিরিয়ে আনুন।”
সম্প্রতি এক বিচারপতির সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে স্পিকার রুলিং দেন। তবে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই রুলিংয়ের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই বলে পর্যবেক্ষণসহ রায় দেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ।
এ বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারপতি নিয়োগের প্রসঙ্গ টেনে আনেন তোফায়েল।
তিনি বলেন, “এখন পলিটিক্যালি বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শুনেছি তিনি (আলতাফ) আইন মন্ত্রীর জুনিয়রও ছিলেন। বিচারপতি হতে হলে ধারাবাহিকভাবে দশ বছর উচ্চ আদালতে প্রাকটিস করতে হয়। তার কনটিনিউয়াস দশ বছর নেই।”
তোফায়েল আহমেদ স্পিকারের রুলিংয়ের ওপর রায় প্রসঙ্গে তার অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস- এই রায় কোর্টে বসে দেওয়া হয়নি।”
এর আগে শেখ ফজলুল করিম সেলিম একই বিষয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “বিচারপতিরা গায়েবি ও ভূতুড়ে রায় দিয়েছেন। বিচারপতিরা তাদের সীমা লংঘন করেছেন।”
স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে তোফায়েল বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করলেন বিশ্বজিৎ রায় নামের এক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। কে এই বিশ্বজিৎ রায় ?”
এই মামলায় স্পিকারের বক্তব্য শোনা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, “কে এই আলতাফ হোসেন? ২০০১ সালে আইনজীবীর সনদ পেলেন। এরপর ব্যারিস্টারি করতে লন্ডনে চলে গেলেন। আমাদের সময়ে এএজি আর ডিএজি হলেন মনিকের (এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক) কোর্টে। বিচারপতি হয়ে আবার বসলেন মানিকের কোর্টে।”
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর ভাইয়ের ছেলে জাফর নামে একজনকে বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হলেও তারও আইনজীবী হিসাবে দশ বছর হয়নি বলে দাবি করেন তোফায়েল আহমেদ।
প্রসঙ্গত, ব্যারিস্টার জাফর আহমেদ বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর বড় ভাই ব্যারিস্টার ওমর ফারুকের মেয়ে ব্যারিস্টার ইলোরা আহমেদের স্বামী। জাফর আহমেদ ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি মাসে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন।
শেখ সেলিম বলেন, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মানে এই নয় যে- যে যা খুশি বলবেন, যে ভাবে খুশি চলবেন। বিচারপতিরা আইনের বাইরে নয়। বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু সার্বভৌম নয়।”
বিচারপতিরা এই রায় দিয়ে তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন বলেও দাবি করেন শেখ সেলিম। সুপ্রিম জুডিশিয়াল গঠন করে এই বিচারপতিদের ‘ইমপিচ’ করার দাবি জানান তিনি।
শেখ সেলিমের বক্তব্যের পর ¯িপকারের আহ্বানে আইন মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বক্তব্য রাখেন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
এই বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদনের কথা উল্লেখ করে কামরুল বলেন, “এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আলোচনার অনুরোধ করছি।”
এরপর স্পিকার আব্দুল হামিদ বলেন, “এই দেশের স্পিকার হিসাবে আমি বলতে চাই- এটা ভূমি বিরোধ বা হত্যা মামলা নয়। এটা সংবিধান নিয়ে আলোচনা। সাব জুডিশিয়াল হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
এ বিষয়ে পরবর্তিতে মন্তব্য জানাবেন স্পিকার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসইউএম/এমএইচসি/এএল/২২১২ ঘ.