অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখল হবে রাষ্ট্রদ্রোহিতা

সংবিধান বাতিল ও অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকে 'রাষ্ট্রদ্রোহিতা' বিবেচনা করে দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ার বিধান যুক্ত হলো সংবিধানে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2011, 08:10 AM
Updated : 16 August 2020, 12:38 PM

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১-এ একটি নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে এ বিষয়ে।

অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের শাস্তির বিষয়ে সংশোধিত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (ক)-এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রয়োগে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ রদ, বাতিল বা স্থগিত করলে কিংবা করার উদ্যোগ নিলে বা ষড়যন্ত্র করলে তা রাষ্ট্রদোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবে।

গত ১৫ মে আপিল বিভাগ এক রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের সপ্তাম সংশোধনী বাতিল করে দেয়। ফলে এরশাদের শাসনামলের ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত জারি করা সব সামরিক ফরমান, আদেশ অবৈধ হয়ে যায়।

তবে ওই সময়ের কিছু বিষয় শর্ত সাপেক্ষে মার্জনা করে রাষ্ট্রের পক্ষে করা সব চুক্তি বহাল রাখতে বলে আদালত।

এর আগে সপ্তম সংশোধনীর বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, "খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সা'দাত মোহাম্মদ সায়েম এবং জিয়াউর রহমানের মতো এইচএম এরশাদও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী। তার এ কাজকে মার্জনা করা যেতে পারে না। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে এরশাদ তার দায় এড়াতে পারেন না।"

ভবিষ্যতে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল রোধে সংসদ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর শাস্তি নির্ধারণ করতে পারবে বলেও রায় দেয় হাইকোর্ট। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে।

এছাড়া ২০১০ সালের ২৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে জিয়াউর রহমানের সময়ে করা পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে এবং সংবিধানকে পঞ্চম সংশোধনীর আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

আদালতের ওই রায়ের আলোকে সংবিধান সংশোধনের জন্য বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করে সরকার। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সংসদে পাস করা হয়।

অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের শাস্তির বিষয়ে সংশোধিত সংবিধানে বলা হয়েছে, "এ অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।"

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। ১৫ আগস্ট থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ওই বছরই ৩ ও ৬ নভেম্বর সামরিক অভ্যুত্থানের পর বিচাপতি সায়েমকে দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং ১৯৭৭ এর ২১ এপ্রিল স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ওইদিনই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন জিয়া। পরে নির্বাচন দিয়ে সরকার গঠন করেন এবং ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত রাস্ট্রপতির দায়িত্ব পান করেন।

জিয়ার মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল এইচ এম এরশাদ। শুরুতে সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করলেও পরে নির্বাচন দিয়ে ১৯৮৬ সালে দেশের রাষ্ট্রপতি হন। ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ব্যাপক গণ আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

আদালতের রায়ে এই চারজনকেই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নেন ফখরুদ্দীন আহমদ।

তার নেতৃত্বে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ম ভেঙে প্রায় দুই বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করে।