কোকোর অনুপস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার মুদ্রাপাচার মামলায় তাকে এ দণ্ডাদেশ দিয়েছেন ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. মোজাম্মেল হোসেন।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তারের পর খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা হলেও রায় এটাই প্রথম।
জরুরি অবস্থায় গ্রেপ্তার এবং সরকারের নির্বাহী আদেশে ছাড়া পেয়ে বিদেশ যাওয়ার পর ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে কোকোর বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলার সোয়া দুই বছরের মধ্যে রায় হলো।
বিএনপি আগে থেকে বলে আসছে, 'সাজানো' রায় দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করা হচ্ছে। কয়েকমাস আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুদ্রাপাচার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ দেওয়াকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছে প্রধান বিরোধী দল।
রায় প্রত্যাখ্যান করে সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা পুরান ঢাকার আদালতপাড়ায় বিক্ষোভ করে। রায়ের আগেই আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয় তারা। অন্যদিকে মিছিল বের করে সরকার সমর্থক আইনজীবীরাও।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী আনিসুল হক বলেছেন, রায়ে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছিলো না।
এ রায় ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ছিলো আদালত এলাকায়। দুই শতাধিক পুলিশ মোতায়েন থাকার কথা জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক সাইরুল ইসলাম।
রায়ের আগে আদালতে ঢোকা নিয়ে বিরোধী দল সমর্থক আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের বাগ-বিতণ্ডাও হয়। রায়ের পর তারা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন, দলীয় বিচারকের মাধ্যমে কোকোর বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়েছে।
এ মামলায় কোকোর সঙ্গে সাবেক নৌমন্ত্রীয় প্রয়াত আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মনকেও আসামি করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, কোকো অবৈধ উপায়ে অর্জিত ৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৭২ মার্কিন ডলার এবং ২৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬০৪ সিঙ্গাপুরি ডলার সায়মনের সহায়তায় সিঙ্গাপুরে পাচার করেছেন।
মুদ্রাপাচারে সহায়তা করায় আদালত কোকোর মতো সায়মনকেও ছয় বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। সায়মন পলাতক।
তাদের দুজনকে মোট ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে জরিমানার অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে বিকল্প কিছু এ আইনে নেই বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
পাচার করা অর্থ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে তা ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
কোকো ও সায়মন গ্রেপ্তার কিংবা আত্মসমর্পণের দিনে থেকে সাজা কার্যকর হবে বলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা আবু সাঈদ ২০০৯ সালে মামলা করলেও কোকো এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে গড়ায়।
মামলাটি কোন পুরনো, না নতুন আইনে চলবে- তার সুরাহা হলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে এসে গত ৬ জুন পুরনো আইনে (২০০২) নতুন করে এ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের বক্তব্য শোনে আদালত।
কোকোর আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলছেন, কোকোকে সাজা দেওয়ার জন্য দ্রুত সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
তিনি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আদালত দ্রুততম সময়ে ২১ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। আদালতের নথিতে কোকোকে পলাতক দেখানোয় সাক্ষীদের জেরা করা সম্ভব হয়নি। ফলে এই রায় হবে একতরফা।"
জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মায়ের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন কোকো। এরপর ২০০৮ সালের মে মাসে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান তিনি।
মুক্তির মেয়াদ কয়েকবার বাড়ালেও গত বছরের ১৯ অগাস্ট তা সরকার আর না বাড়ানোয় সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর আদালত ৩১ অগাস্টের মধ্যে কোকোকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যান কোকো।
এদিকে কোকো না ফেরায় তাকে পলাতক দেখিয়েই বিচার শুরু করে বিচারিক আদালত।
কোকোর বিরুদ্ধে আরো চারটি মামলা রয়েছে বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন। তার বড় ভাই লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা এক ডজনের বেশি।