দলের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ইসির উদ্যোগ

রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ব্যয় ও বার্ষিক আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশন নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায়ও সংশোধনী আনা হচ্ছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2010, 05:11 AM
Updated : 10 August 2010, 05:11 AM
মঈনুল হক চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ঢাকা, অগাস্ট ১০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ব্যয় ও বার্ষিক আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশন নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায়ও সংশোধনী আনা হচ্ছে।
সোমবার নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব বিবরণী ফরমে সংশোধনী আনার চিন্তাভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ের মতামত জানতে উপ-নির্বাচন কমিশনারদের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, "দলগুলোর ব্যয়ে আরো স্বচ্ছতা আনতে এবং খাতওয়ারী ব্যয়বিবরণী দাখিলের সুবিধার্থে নির্ধারিত ফরম সংশোধন করা হবে।"
বিদ্যমান নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, অনুদান, প্রচারণা, পরিবহন, জনসভা, স্টাফ খরচ, আবাসন ও প্রশাসনিক এবং বিবিধখাতে মাত্র এক পৃষ্ঠার একটি ফরমে দলের নির্বাচনী ব্যয় বিবরণী ইসিতে জমা দেওয়া হয়।
নির্বাচনে অংশ নিতে ইসি প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে এবং দলের নির্বাচনী ব্যয়ও আসন অনুপাতে নির্ধারণ করে দেয়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও) অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে তাদের ব্যয়ের বিবরণী কমিশনে দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৫০ জন প্রার্থীর জন্য কোনো রাজনৈতিক দল সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০০ প্রার্থীর জন্য দেড় কোটি টাকা, সর্বোচ্চ ২০০ প্রার্থীর জন্য তিন কোটি টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩০০ আসনের প্রার্থীর জন্য সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় করতে পারবে।
নবম সংসদে দুই শতাধিক আসনে প্রার্থী দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্ধারিত সাড়ে চার কোটি টাকা, বিএনপি ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৫০০ টাকার নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছে।
অন্যদিকে ৩৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামায়াতে ইসলামী ব্যয় দেখায় ৭৪ লাখ ৭২ হাজার ৪০৮ টাকা।
ক্ষমতাসীন দল তাদের ব্যয় বিবরণী সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করে নি। বিএনপি অবশ্য তাদের এই ব্যয় বিবরণী প্রকশ করে জানিয়েছে, প্রার্থী অনুদান বাবদ এক কোটি ২০ লাখ টাকা, প্রচারণা বাবদ এক কোটি ৮৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা, পরিবহন বাবদ ৬৩ লাখ ২ হাজার ৭৫০ টাকা, জনসভা বাবদ ১৩ লাখ ১০ হাজার টাকা, কর্মকর্তা-কর্মচারী বাবদ ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ টাকা, আবাসন বাবদ ৪৭ লাখ ২৪ হাজার ৫৫০ টাকা এবং বিবিধ খাতে ২ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হয়।
ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নির্বাচনে দলগুলোর ব্যয়ের বিবরণ আর এতো সহজে দাখিল করা যাবে না। আগামী সংসদ থেকে খাতভিত্তিক বিস্তারিত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যয় দেখাতে হবে। এজন্য বিধিমালায় নির্ধারিত ফরম সংশোধিত আকারে গত মে মাসে কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হয়।
সংশোধিত ফরমের খসড়ার ব্যাপারে গত ২১ জুলাই উপ-নির্বাচন কমিশনারদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ের মাঠকর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদেরকে মতামত পেশ করতে বলা হয়।
ইসির এই কর্মকর্তা আরো জানান, প্রস্তাবিত সংশোধনীতে প্রথম পৃষ্ঠায় থাকছে-দলের নাম, ঠিকানা ও প্রতীক, ব্যাংকের নাম ও হিসাব নম্বর, নির্বাচনী এলাকার সংখ্যা, দলীয় প্রধানের নাম ও সাধারণ সম্পাদক এবং মোট খরচের পরিমাণ।
এরপর পর্যায়ক্রমে খাতভিত্তিক ব্যয় দেখাতে হবে। এতে থাকছে: জনসভা/পথসভা (মাইক অথবা হ্যান্ড মাইকের খরচসহ), পোস্টার (মুদ্রণকারী প্রেসের নাম, ডিজাইনবাবদ খরচ, সাইজ, সংখ্যা, প্রতি পোস্টার বাবদ খরচ, মুদ্রণ ও কাগজ খরচ, পরিবহন ও ঝুলানো খরচ ভাউচারসহ), একইভাবে লিফলেট, হ্যান্ডবিল, স্টিকার, ব্যানার, ডিজিটাল ব্যানার (সিনথেটিক, কাপড়, প্রিন্ট), ঘরোয়া বৈঠক/সভা (তারিখ, সময়, ভেন্যু, ভাড়া, জনবল/শ্রমিকের পারিশ্রমিক, আসবাবপত্রের ভাড়া), মাইকিং (এ কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ধরন ও ভাড়া, শ্রমিকদের পারিশ্রমিক), পোট্রেট, নির্বাচনী প্রতীক (সাইজ ও কী দিয়ে তৈরি, পরিবহন ও টাঙ্গানো খরচ), অফিস খরচ (কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা, মহানগরী ও অন্যান্য কার্যালয়ের ভাড়া, অফিস স্টাফদের পদবী, আসবাব খরচ), অফিস আপ্যায়ন (জনপ্রতি দৈনিক খরচসহ), কর্মবাবদ খরচ, যাতায়াত (কেন্দ্র থেকে থানা বা অন্য কার্যালয়), টেলিভিশন বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারণা খরচ (নামসহ)।
এছাড়া প্রার্থীদের অনুদান খাতে নির্বাচনী এলাকার নম্বর ও প্রার্থীর নাম, প্রার্থীকে বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান ও মূল্য, প্রার্থীর পক্ষে জনসভাসহ মোট ব্যয় দেখাতে হবে।
বিবিধ ব্যয় কী কী খাতে হয়েছে তারও বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সম পর্যায়ের কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ ইসিতে জমা দিতে হবে।
রাজনৈতিক দলের বার্ষিক লেনদেনও ইসি পর্যালোচনা করছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন বলেন, দলের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট নিয়েও অস্বচ্ছতা থাকলে তা পর্যালোচনা করা হবে। তবে আগামী নির্বাচনে খাতওয়ারী ব্যয়ের বিবরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে কমিশনের।
রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নিবন্ধিত দলগুলোর বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার শেষ সময়সীমা ছিল গত ৩১ জুলাই। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিএনপিসহ ২১টি দল তাদের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট জমা দেয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বাকী ১৭ টি দলকে অডিট রিপোর্ট জমা দিতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে ইসি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/জেবি/এইচএ/১৭১১ ঘ.