পদ্মা সেতু: জাজিরায় যানজটের মধ্যেই ৭ মিনিটের বিদ্যুৎ বিভ্রাট

পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরুর প্রথম দিন সন্ধ্যায় জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজায় পার হওয়ার অপেক্ষায় থাকা যানবাহন লাইন আরও দীর্ঘ করেছে ৭ মিনিটের বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2022, 03:09 PM
Updated : 26 June 2022, 07:06 PM

রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৩ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে যায়। তাতে টোল প্লাজার কম্পিউটার, প্রিন্টার এবং টোলের ডিসপ্লে বন্ধ হয়ে যায়।

ওই সময় টোল নেওয়া এবং গাড়ি ছাড়া বন্ধ থাকে। বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস এবং কভার্ড ভ্যান তখন সেতু পার হওয়ার অপেক্ষায়।   

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর প্রথম দিন সন্ধ্যায় জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে টোল নেওয়া বন্ধ ছিল কিছু সময়ের জন্য। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

এরপর ৭টা ১০ মিনিটে জেনারেটর চালু হলে সচল হয় কার্যক্রম। ততক্ষণে টোল প্লাজায় যানবাহনের জট আরও বেড়ে যায়।

ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এই ২১টি জেলার মাওয়া রুট ব্যবহারকারী বাসসহ যানবাহনগুলো এতদিন ফেরিতে পারাপার হত।

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর প্রথম দিন রোববার জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজায় অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর রোববার সকাল থেকে সেতুর দুই প্রান্তের ১৪টি টোল গেইট সবার চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রথম যাত্রার অভিজ্ঞতা স্মরণীয় করে রাখতে অনেকেই মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন বাহন নিয়ে রাতে এসে অপেক্ষা করছিলেন সেতুর দুই প্রান্তে।

ফলে ভোরের দিকেই দুই টোল প্লাজায় যানবাহনের ভিড় জমে যায়। পদ্মা সেতুতে হেঁটে ওঠা কিংবা গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলা বারণ থাকলেও মানুষের উচ্ছ্বাসে সেসব ভেসে যায়।

দুপুরের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা কমে এলেও বিকাল থেকে আবার ভিড় বাড়তে থাকে টোল প্লাজায়। সন্ধ্যায় জাজিরা প্রান্তে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।

সে সময় এক ঘণ্টা ধরে টোল প্লাজায় আটকে থাকা সার্বিক পরিবহনের বাস চালক হামিদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইজ গাড়ির অনেক চাপ। অনেক প্রাইভেট ডানে-বামে ঢুকাইয়া দিছে। এই কারণেও জ্যাম লাগছে।”

সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা পার হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গিয়েছিলেন ১২ জনের একটি দল। সন্ধ্যায় ফিরতি পথে দেখা হয় তাদের সঙ্গে। তাদের একজন জিয়াউল ইসলাম বলেন, অফিস ছুটি নিয়ে, ব্যবসা বন্ধ রেখে সব বন্ধুরা মিলে মোটর সাইকেলে পদ্মা সেতু পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন আগেই। শনিবার সকালে যানজট পেরিয়ে ওপারে গেছেন, সারাদিন ঘুরে ফিরে সন্ধ্যায় আবার যানজটেই পড়তে হলো।

একটি কাউন্টারে টোলগ্রহণের দায়িত্বে থাকা হাফসা নামের একজন কর্মী জানালেন, “কিছুটা জটিলতা হচ্ছে চালকদের জন্য। তারা অনেকেই জানেন না কত টাকা টোল। দেখা গেছে ১৩০০ টাকা টোল, দিচ্ছেন এক হাজার টাকা। আবার তার কাছ থেকে চেয়ে টাকা নিতে হচ্ছে। আবার ১৩শ টাকা টোল হলেও দিচ্ছেন ১৫ শ বা ২ হাজার টাকা। তখন তাকে টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। এখানে কিছুটা সময় লাগছে।”
টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টোল নেওয়ার জন্য যতটুকু সময় দরকার আমরা সেই সময়ের মধ্যেই টোল নিচ্ছি। কিন্তু গাড়ির চাপ বেশি থাকায় আগে থেকেই যানজট তৈরি হয়েছে। আমাদের কারণে কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছে তেমন নয়। ৭ মিনিট বিদ্যুৎ ছিল না, কিন্তু এতে আমাদের কী করার আছে?”

যানবাহনের ভিড়ের মধ্যেই কিছু ব্যক্তিগত ও বাস লেইন ভেঙে আসার চেষ্টা করে। তাতে পরিস্থি আরও জটিল হয়েছে বলে টোল প্লাজার কর্মীরা জানান।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন গোলাম মর্তুজা অন্তু]