পদ্মা সেতুতে প্রথম দিনে বাইকের ঢল

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক ধরে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর দিকে এগিয়ে চলছে একটি মোটরসাইকেল। দুজন আরোহীর একজন নারী। পেছনে একটি লাঠিতে শক্ত করে বাঁধা জাতীয় পতাকা। বাইকটি দৃষ্টি কাড়ছিল চলতি পথের মানুষের।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2022, 02:39 PM
Updated : 26 June 2022, 07:01 PM

পদ্মা সেতু টোল প্লাজা এলাকায় গিয়ে কথা হয় ওই বাইকের আরোহীর সঙ্গে। তার নাম ফারুক ঢালী, গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরায়। ঢাকায় ব্যবসা করেন, পদ্মা সেতু চালুর পর স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন তিনি।

ফারুক বলেন, সেতুতে যাতায়াতের প্রথম দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই মোটরসাইকেলে পতাকা বেঁধে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।

“জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশ স্বাধীন করেছে। তার কন্যা আমাদের এই পদ্মা সেতু দিয়েছে। তাদের জন্য আমার মতো মানুষের দেওয়ার মতো কিছুই নাই। এজন্যই ভাবলাম জাতীয় পতাকা বেঁধে তাদের সম্মান জানাই।”

পদ্মা সেতুতে আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরুর অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি শত শত মোটরসাইকেলে পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে। দল বেঁধে, আনন্দ-উল্লাস আর হৈ-হুল্লোড় করে উদযাপন করছেন তারা।

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর প্রথম দিন রোববার মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা সয়লাব ছিল মোটরসাইকলে।

রোববার সকাল ছয়টায় পদ্মা সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট আগেই ৫টা ৫০ মিনিটে আমিনুল ইসলাম নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী মাওয়া টোল প্লাজার ৩ নম্বর লেইনে ১০০ টাকা টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পার হন।

তবে তাদের অনেকেরই মাথায় হেলমেট ছিল না, এক মোটরসাইকেল তিনজনকেও যেতে দেখা গেছে।

আমিনুল জানালেন, কামরাঙ্গীর চর থেকে তারা বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে এসেছেন পদ্মা সেতু পার হওয়ার জন্যই। টোল প্লাজা খোলার অপেক্ষায় ছিলেন ভোর থেকে। তার মোটর সাইকেল সামনে থাকায় প্রথম সুযোগটা তিনিই পেয়ে গেছেন।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী আবদুর রহিমের শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে। তিনি বলেন, সেতু চালু হওয়ার পর স্ত্রী তাড়া দিচ্ছিল যাওয়ার জন্য। এজন্য পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে রওনা হয়েছেন তিনি।

“ওর (রহিমের স্ত্রী) আর তর সইছিল না। এজন্য বাইক নিয়ে বের হয়ে আসলাম। এটা আমাদের জন্য ঐতিহাসিক মুহুর্ত। সেতু পার হয়ে আস্তে আস্তে চলে যাব শ্বশুরবাড়ি।”

পিরোজপুর শহরের বাসিন্দা আরিফুল ইসলামের অসুস্থ্ শাশুড়িকে দেখতে গিয়েছিলেন চাঁদপুর। যাওয়ার সময় লঞ্চে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে সেতু দিয়ে এসেছেন।

“চাঁদপুর থেকে পিরোজপুর অনেক দূরে। অনেক পথ ঘুরতে হবে। কিন্তু ব্রিজ চালু হওয়ার পর মনে করলাম কষ্ট হইলেও ঘুরে যাই। এজন্য আসলাম। অনেক পথ যেতে হবে, সারাদিনে আস্তে আস্তে চলে যাব।”

পদ্মা সেতু দেখতে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে মোটরসাইকেলে করে এসেছেন তানভীর হাসান ও সোহেল মাহমুদ।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরদিন রোববার যান চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে ঢল নামে মোটরসাইকেলের। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

তানভীর বলেন, সেতু চালুর পর শুধু তা দেখতে এসেছেন তারা। সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ঘুরে আসবেন।

“এটা এখন দেশের সবচেয়ে বড় সেতু। আমাদের গর্বেরও সেতু। এত আলোচনা হয়েছে এই সেতু নিয়ে তাই দেখতে এলাম প্রথমদিনই।”

পদ্মার বুকে তৈরি হওয়া ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সংযোগ স্থাপন করেছে। দেশের দীর্ঘতম এই সেতুতে গাড়ি ও রেল দুটোই চলবে। নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে যা শেষ হল সাত বছরে।

পদ্মা সেতুতে প্রথম দিন কতগুলো মোটরসাইকেল পার হয়েছে তার সঠিক তথ্য রোববার দুপুর পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। মাওয়া প্রান্তের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

অন্যদিকে জাজিরা প্রান্তের টোল ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন জানিয়েছেন, দিনের প্রথম ৮ ঘণ্টায় পদ্মা সেতু পার হয়ে জাজিরা প্রান্ত থেকে ঢাকার দিকে গেছে ৬ হাজার ৭৬২ যানবাহন। তবে এসব যানবাহনের সিংহভাগই মোটরসাইকেল।