ঈমান ধরে টানাটানি করলে ‘বুকে লাগে’: কায়কাউস

‘ঈমানের সঙ্গে’ কাজ করার পরেও ঈমান ধরে টানাটানি করলে ‘বুকের মধ্যে খুব লাগে’ বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2022, 02:21 PM
Updated : 16 April 2022, 02:46 PM

শনিবার এফবিসিসিআই সম্মেলন কক্ষে ‘এলডিসি পরবর্তীতে রপ্তানির চ্যালেঞ্জ: বেসরকারি খাতের জন্য বিকল্প’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি চলমান মেগা গ্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির যে অভিযোগ তোলে, সেই প্রসঙ্গ টেনে কায়কাউস বলেন, “ওনারা (সিপিডি) বললেন, আমাদের বৃহৎ বৃহৎ প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে। আমাদের কোন প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে হচ্ছে বলেন?

“মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে জাইকার অর্থায়নে। এর প্রত্যেকটি ট্রানজেকশন হচ্ছে জাইকার মাধ্যমে। তাহলে কি আমাদের দুর্নীতির পার্টনার জাইকা?”

বিদেশি ঋণের প্রকল্পে বিদেশিরাই টাকা খরচ করায় দুর্নীতির সুযোগ নেই দাবি করে তিনি বলেন, “মেট্রোরেলসহ র‌্যাপিড ট্রানজিটের আরও অনেকগুলো বড় ধরনের অবকাঠামো প্রকল্পের অর্থায়ন করছে জাইকা। তাহলে কি আপনারা বুঝাতে চাইছেন জাপান আমাদের সাথে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে? আরেকটা সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর (পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র), এটার তো আমরা পয়সাও দেখতেছি না। এই প্রকল্পে যে টাকা নিচ্ছি, ওরাই (রাশিয়া) খরচ করতেছে।”

“অথচ আপনারা সবসময় আমাদেরকে দুর্নীতিবাজ বানাই দিচ্ছেন, হোয়াট ইজ দিস? ডোন্ট উই হ্যাভ আওয়ার ওন প্রাইড? উই আর সান অব দিস সয়েল। উই হ্যাভ ডান আওয়ার জব অ্যান্ড উই হ্যাভ মেইক দিস কান্ট্রি, অল অব আস।”

মুখ্য সচিব বলেন, “আপনারা ব্যবসা করতেছেন, আমরা চাকরি করতেছি। সবাই মিলে আমরা এই দেশকে এগিয়ে নেব। আমাদের দেশ এখন পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এটা নিয়ে গর্ব করা উচিৎ।”

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তারা বলছে- কোভিড-১৯ এর প্রতিটি টিকা কেনায় আমাদেরকে ৬৯ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। অথচ এসব টিকা কেনায় এডিবি, বিশ্ব ব্যাংক জড়িত ছিল।”

টিআইবি বাংলাদেশকে ‘চোর’ বলছে অভিযোগ করে কায়কাউস বলেন, “অথচ টিআইবিকে অর্থায়ন করছে অস্ট্রেলিয়ান ফার্ম বিপিএইচ। প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশের ক্ষতি করার জন্য বার বার জরিমানার সম্মুখীন হয়েছে।

“আপনারা তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন কেন? আমাদের খালি চোর বলবেন, এটা তামাশা পাইছেন নাকি আপনারা? শুধু বাংলাদেশকে চোর বলবেন, এটা কি ফাইজলামি নাকি?”

সরকারি অফিসগুলোতে নিম্ন পর্যায়ে ‘কিছুটা’ দুর্নীতি থাকলেও উপরের পর্যায়ে দুর্নীতি নেই বলেও তিনি দাবি করেন।

আবেগতাড়িত হয়ে কথা বলায় একপর্যায়ে দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব বলেন, “ঈমানের সাথে কাজ করার পরে যদি ঈমান ধরে টানাটানি করেন, তখন কিন্তু বুকের মধ্যে লাগে।”

কর্মশালায় বিডা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার পর বাংলাদেশে মূলত তিনটি চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে। সেগুলো হচ্ছে উৎপাদন সক্ষমতা, ব্যবসা সহজীকরণ এবং শ্রম অধিকার।

“এলডিসি পরবর্তীতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা হারাবে। এরপর বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে মুক্তিবাণিজ্য চুক্তি এবং অগ্রাধিকার চুক্তির মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যে টিকে থাকতে হবে।”

এক্ষেত্রে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “উন্নত বাজারগুলো আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা না থাকলে আমাদের সাথে চুক্তি করবে না। এ জন্য বেসরকারিভাবে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে হবে।”

আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য সব রপ্তানি পণ্যেই সমান প্রণোদনা দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসা সহজীকরণে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে জানিয়ে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, “আগের সমস্যার প্রায় ৮০ শতাংশই এখন সহজ হয়ে গেছে। তবে এখনও কিছুটা পিছিয়ে আছি।”

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, “উৎপাদন সক্ষমতাই হয়তো আমরা খুব পিছিয়ে থাকব না। কিন্তু শ্রম অধিকার নিয়ে আমরা বেশ পিছিয়ে আছি। তাই এই খাতের ওপর কাজ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন,“ আমাদের রপ্তানির প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু আমদানি প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছি।”

আমদানিতে গতি আনতে না পারলে এনবিআর ভেঙে দেওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

এর আগে মূল প্রবন্ধে এফবিসিসিআই উপদেষ্টা এবং ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, “স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হলে রপ্তানি বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্য রপ্তানিবাজারে। আমাদের রপ্তানির মোট ৭২ শতাংশই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পায়।

“স্বল্পোন্নত দেশ হলে আর রপ্তানিপণ্যের ওপর ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। বর্তমান আমাদের রপ্তানির ওপর ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু এই ভর্তুকি উঠে গেলে বিকল্প কী করতে হবে, তা খুঁজে বের করতে হবে।”

এলডিসি পরবর্তী সময়ে পেটেন্ট সুবিধা উঠে গেলে ওষুধ খাত সমস্যায় পড়তে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত এই কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান।