থানা মামলা নিচ্ছে না, অভিযোগ পুলিশ সার্জেন্ট মহুয়ার

ঢাকায় গাড়ির ধাক্কায় অবসরপ্রাপ্ত এক বিজিবি সদস্যের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা করতে চেয়েও ‘পারছেন না’ বলে অভিযোগ করেছেন তার পুলিশ সার্জেন্ট মেয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2021, 07:55 PM
Updated : 16 Dec 2021, 02:27 AM

গত ২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে একটি ব্যক্তিগত গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনোরঞ্জন হাজং। দুই দফা অস্ত্রপচারে তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় তিনি এখন বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি।

মনোরঞ্জনের একমাত্র মেয়ে মহুয়া হাজং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সার্জেন্ট পদে কর্মরত।

তার অভিযোগ, তার বাবা মনোরঞ্জন হাজংকে ধাক্কা দেওয়া লাল রঙের বিএমডব্লিউ গাড়িটির চালকের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু থানা তা নেয়নি।

তার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে বুধবার বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়াকে ফোন করা হয়েছিল।

ফোন ধরে কুশল বিনিময়ের পর মহুয়া হাজংয়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি লাইন কেটে দেন।

মহুয়া হাজং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার পরদিন, অর্থাৎ ৩ ডিসেম্বর অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে বনানী থানায় গিয়েছিলেন তিনি।

“থানার একজন পরিদর্শক আমাকে বলেন, ‘তোমার চাকরির বয়স তো অল্পদিন। এ সমস্ত বিষয় নিয়ে বেশি মাতামাতি করো না, বিপদে পড়ে যাবা। আমি তো তোমার চেয়ে সিনিয়র, আমার কথা শোনো’।“

এমন কথা শোনার পর সার্জেন্ট মহুয়া থানা থেকে চলে যান।

তিনি বলছেন, এজাহারে সেই গাড়িচালক এবং তার ‘প্রভাবশালী’ বাবার নামও তিনি লিখেছিলেন। কিন্তু থানা মামলা নেয়নি।  

“যারা দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে সমঝোতা করার জন্য চাচ্ছে, তাদের আকার-ইঙ্গিতে এটা বুঝতে পেরেছি।"

এ বিষয়ে বনানী থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কথা বলতে না চাওয়ায় বুধবার দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে গিয়ে অতিরিক্ত উপ কমিশনার হাফিজ আল আসাদের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানতে চান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক।

প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষায় রেখে কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন অতিরিক্ত উপ কমিশনার । এরপর তিনি বলেন, ‘দুই-তিন দিন পর’ তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ করবেন।

পুলিশের ওই দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তা উপ কমিশনার ফারুক আহমেদ সে সময় কক্ষে ছিলেন না।

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মনোরঞ্জন হাজং গুলশানের একটি রেস্তোঁরায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। ওই দুর্ঘটনার খবর বিভিন্ন টেলিভিশন স্টেশনে প্রচারও করা হয়।

এসব খবরের ভিডিওতে দেখা যায়, ২ ডিসেম্বর রাত ২টার পর বিমানবন্দর সড়কে মোড় ঘোরার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মনোরঞ্জন হাজং। একটি গাড়ি এসে ধাক্কা দিলে তিনি ছিটকে পড়েন।

দুর্ঘটনার পর মনোরঞ্জন হাজংকে উদ্ধার করে রাজধানীর জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) ভর্তি করে পুলিশ।

গত ৩ ডিসেম্বর মনোরঞ্জনের ডান পায়ের গোড়ালি কেটে ফেলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু সংক্রমণ ছড়ালে পাঁচ দিন পর ৮ ডিসেম্বর আবারও অস্ত্রপচার করে ডান পাটি হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়।

হৃদরোগের পাশাপাশি ডায়েবেটিস রয়েছে ষাটোর্ধ্ব মনোরঞ্জনের। সব বিবেচনায় পরে তাকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বারডেম হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক নাজিমুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মনোরঞ্জন হাজং আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”

গত ১৪ ডিসেম্বর যমুনা টিভিতে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখানো হয়, দুর্ঘটনার পর একটি লাল রঙের বিএমডব্লিউ গাড়ি জনতা আটক করে পুলিশে দেয়। গাড়ির চালকের ছবিও দেখানো হয়।

মামলা না নেওয়ার বিষয়ে ওই টেলিভিশনকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, “বিষয়টা আমাদের সদস্যের। আমাদের একটা সিনিয়র কমান্ড আছে, অথরিটি আছে, সবই আছে। আমার তো মনে হয় যে এটা আপনাদের (গণমাধ্যমে) পর্যায়ে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না।

“আমাদের সহকর্মী মামলা না করতে পারার তো কোনো কারণ নেই। এটা তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের পরেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।“