ভাড়া নিয়ে সিদ্ধান্ত রোববার, পরিবহন থাকবে বন্ধ

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলনের ঘোষণায় বড় ধরনের জনভোগান্তির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2021, 03:51 PM
Updated : 7 Nov 2021, 03:20 AM

ভাড়া পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে (বিআরটিএ) পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বসার কথা থাকলেও সেই বৈঠক পিছিয়ে গেছে রোববার পর্যন্ত। 

পরিবহন মালিকরা বলছেন, বাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের আগে সারা দেশে যানবাহন চলবে না।

বাস মালিকদের প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“সারাদেশের মালিকরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সারাদেশের বাস মালিকদের সেন্টিমেন্টের সঙ্গে আমরা কেন্দ্রীয় মালিক সমিতি একমত।”

একই সুরে কথা বলেছেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশেনের সহ সম্পাদক এবং শ্যামলী এন আর পরিবহনের মালিক রাকেশ ঘোষ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সারাদেশের মালিকদের। কেউ লোকসান দিয়ে গাড়ি চালাতে চায় না।”

বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় ইচ্ছেমাফিক ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আসতে থাকে।

এক পর্যায়ে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ড ভ্যান ড্রাইভার ইউনিয়ন ঘোষণা দেয়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার অথবা ভাড়া বাড়ানো না হলে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে বাস এবং পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।

পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের তাজুল ইসলাম বলেন, “আগের দশ দফা দাবি মানা হয়নি, টোল বাড়িয়েছে, আজ লিটারে ১৫ টাকা করে দাম বাড়ানো হল- সব মিলিয়ে কী করব আমরা। এ অবস্থায় আমাদের কোনো উপায় নেই।”

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিকালে বাস ভাড়া ‘যৌক্তিক হারে’ বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও আলাদভাবে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বিআরটিএর কাছে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবারই বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভাড়া বাড়াতে মালিকদের কাছ থেকে আবেদন পেয়েছেন তারা। সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রোববার বৈঠক ডাকা হয়েছে।

“বাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ বিষয়ক কমিটির সবাই থাকবেন। এই কমিটিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সব স্টেকহোল্ডার উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”

এ অবস্থায় পরিবহন মালিকরা গাড়ি বের না করলে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে- সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নূর মোহাম্মদ বলেন, বাস চলাচল ‘স্বাভাবিক থাকবে’ বলেই তার বিশ্বাস।

“পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে কোনো ঘোষণা দেয়নি মালিক সমিতির নেতারা। কিছু ভুল বোঝাবুঝি আছে, বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন বাস চালাবেন।”

এখানে যে ফাঁকটি রাখা হয়েছে, মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহর কথাতেও তা স্পষ্ট।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বাস চালানোর সিদ্ধান্তের ভার তারা বিভিন্ন জেলার মালিকদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তবে জেলার মালিকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছেন, তারা গাড়ি চালাবেন না।

“আমাদের কাছে মনে হয়েছে মালিকদের বক্তব্যটা যৌক্তিক। কারণ, এখন গাড়ি চালালে গাড়ি থেকে কোনো ইনকাম পাবে না বরং তেলের দাম বাড়ায় মালিকদের ভর্তুকি দিতে হবে।”

আর রাকেশ ঘোষ বলেন, “এটা আমাদের সিদ্ধান্ত না। এটা মালিকদের সিদ্ধান্ত। আমি নিজেও গাড়ি মালিক। আমি লস দিয়ে গাড়ি চালাব না। বাড়তি তেলের টাকা তো আমি ঘর থেকে এনে দিতে পারব না। আমরা টিকিট ক্যান্সেল করে দিচ্ছি।”