গ্রেপ্তার কাদের চৌধুরী বড় একজন প্রতারক: গোয়েন্দা পুলিশ

কোটি টাকার গাড়িতে স্টিকার আর ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড লাগিয়ে নিজের পরিচয় দিতেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। পুলিশ বলছে, ভুয়া পরিচয়পত্র আর ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন শতকোটি টাকা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2021, 01:54 PM
Updated : 9 Oct 2021, 02:26 PM

আব্দুল কাদের চৌধুরী ওরফে কাদের মাঝিকে গ্রেপ্তারের দুদিন পর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ আকতার।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রতারণামূলক নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কাদের চৌধুরী ছাড়াও তার স্ত্রী শারমিন চৌধুরী তাদের সহযোগী অফিস কর্মচারী শহিদুল আলম এবং আনিসুর রহমানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমরা বড় মাপের একজন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছি। তার নাম আব্দুল কাদের মাঝি। ১০ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে।

“আদি নিবাস সুবর্ণচর। বাবা ছিলেন ভূমিহীন কৃষক। পরে মাছ ধরেন আর মাঝি ছিল। তারই সন্তান আব্দুল কাদের মাঝি, ঢাকায় এসে আব্দুল কাদের চৌধুরী নাম ধারণ করেন।”

তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়ার পর গত ৭ অক্টোবর কারওয়ান বাজার, মিরপুর, গুলশানে ধারাবাহিক অভিযান চালান গায়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার মশিউর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “কাদের চৌধুরীর কাছে একটি একটি প্রাডো গাড়ি এবং অবৈধ পিস্তল পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা অনেক কাগজ, স্ট্যাম্প, ছবি, সিল উদ্ধার করা হয়।”  

ফাইল ছবি

গোয়েন্দা কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, “তাদের প্রতারণার ফিরিস্তি অনেক। তার মধ্যে রয়েছে ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালে শতশত মানুষের কাছ থেকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের নামে প্রতারণা।

“এই প্রকল্পের সরকারি টাকা পাইয়ে দিবে কিংবা খামার করিয়ে দিবে বলে শতশত কোটি টাকা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র।”

তিনি বলেন, “বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকা কিংবা তারও বেশি অঙ্কের ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে তার অফিসে প্রথমে দেখা করতে বলেন কাদের চৌধুরী। প্রাথমিকভাবে তিনি ৫০ হাজার টাকা ‘ভিজিট’ নেন।

“প্রজেক্ট প্রোফাইল বানানোর কথা বলে দুই থেকে ১০ লাখ টাকা নেন, আর ঋণ পাইয়ে দেওয়ার জন্য শতকরা ২ থেকে ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট হিসাবে নিয়ে থাকেন।”

তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ‘সরকারি প্রকল্প’ বা ‘শতশত কোটি’ টাকার টেন্ডারের ভুয়া কাগজ বানিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ হিসাবে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “সততা প্রপার্টিজ নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এখানেও তার প্রতারণার জাল ছড়ানো আছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন বাড়ি এবং ফ্ল্যাট বিক্রির নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।”

প্রাথমিকভাবে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “গুলশানে তার ৬ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি অফিস আছে। কারওয়ান বাজারেও একটি অফিস করেছে।

“মিরপুর ৬ নম্বরে বসবাস করলেও গুলশানে এবং মিরপুরে তার অনেকগুলো ফ্ল্যাট আছে। গাজীপুরে নয়তলা একটি বাড়ি আছে। আটবিঘার বাগানবাড়ি আছে গাজীপুরের পূবাইলে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে অনেক অ্যাকাউন্ট আছে তার নামে।”

তার সঙ্গে দুই বছর আগে গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত ঠিকাদার জিকে শামীমের মতো বড়বড় প্রতারকের সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “আমারা তাদের প্রতারণা এবং অস্ত্র মামলায় রিমান্ডে এনেছি, তথ্য বের করার চেষ্টা করছি।”

কাদের চৌধুরি গানম্যান নিয়ে চলতো জানিয়ে তিনি বলেন, “জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়া পর থেকে সে এগুলো সরিয়ে ফেলে বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরেছে।”