বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি বলেন, “আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে বলব যে কয়টা ঘর… এই যে ৩০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রত্যেকটার তদন্ত তাদের করতে হবে এবং রিপোর্ট দিতে হবে। এটাই আমার কথা। তাদের রিপোর্ট দিতে হবে।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করে তাদের জমিসহ ঘর উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু বর্ষার শুরুতে কয়েকটি স্থানে ভূমি ধসে ঘর ভেঙে পড়ায় এবং কয়েকটি ঘরে ফাটল দেখা দেওয়ায় নির্মাণের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতিরও কিছু অভিযোগ আসে।
অভিযোগ তদন্ত করে সে সময় পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়। অনিয়ম যাচাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঁচটি দলকে বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান, অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে কিনা, তা যাচাই করে ছবিসহ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে তারা জেলায় জেলায় গিয়ে প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
সম্প্রতি খবর আসে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামে ওবাইদুল বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি তার বরাদ্দ পাওয়া ঘর ‘পছন্দ না হওয়ায়’ ভেঙে ফেলেছেন।আর্থিক ভাবে সচ্ছল ওবাইদুল কীভাবে ওই ঘর পেলেন, তা নিয়েও তখন এলাকাবাসীর মধ্যে প্রশ্ন আসে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা তদন্ত করেছি, দেখা গেছে নয়টি জায়গায় আমরা দুর্নীতি পেয়েছি। আর ১০/১২টা জায়গায় যেখানে অতিবৃষ্টি হল, সেই বৃষ্টির কারণে মাটি ধসে ঘর পড়ে গেছে। সেখানে কিন্তু আরো অনেক ঘর ছিল। আর প্রায় ৩০০টি জায়গায়… প্রত্যেকটি ঘরের ছবি আমার কাছে আছে।
“পুরো তদন্ত করে দেখা গেছে, সেখানে দরজা জানালার উপরে হাতুড়ির আঘাত, ফ্লোরগুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ওটা ভাঙা। সেখানে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ভাঙা। ইটের গাঁথুনির পিলার সেটা ভেঙে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এটা তো দুর্নীতির জন্য হয় নাই। এটা কারা করল? তবে হ্যাঁ, কারা করেছে তদন্ত হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু অ্যারেস্ট হয়েছে এবং যাদের অ্যারেস্ট করা হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কারা হাতুড়ি শাবল দিয়ে ঘর ভেঙে মিডিয়ায় প্রচার করেছে সেই তালিকা করা হয়েছে এবং তালিকাটি তার কাছে রয়েছে।
সেদিন তিনি বলেছিলেন, “সব থেকে দুর্ভাগ্য হল, আমি যখন সিদ্ধান্ত নিলাম, প্রত্যেকটা মানুষকে আমরা ঘর করে দেব, আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত জঘন্য চরিত্রের, আমি কয়েকটা জায়গায় হঠাৎ দেখলাম যে কি ঘর ভেঙে পড়ছে, কোন জায়গায় ভাঙা ছবি- ইত্যাদি দেখার পরে পুরো সার্ভে করালাম কোথায় কী হচ্ছে।
“সেখানে আমরা প্রায় দেড় লাখের মতো ঘর তৈরি করে দিয়েছি। ৩০০টা ঘর বিভিন্ন এলাকায় কিছু মানুষ নিজে থেকে যেয়ে হাতুড়ি,শাবল দিয়ে সেগুলো ভেঙে ভেঙে তারপর মিডিয়ায় সেগুলোর ছবি তুলে দিচ্ছে।এখন তাদের নাম ধাম এগুলো একদম এনকোয়ারি করে সব বের করা হয়ে গেছে।”
সেই বক্তব্যের পর দুদকের তদন্ত বন্ধ রাখার খবর পেয়েছেন জানিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, “আমার প্রশ্ন, তাদের তো তদন্ত বন্ধ করার কথা না। তাদেরকে তো তদন্ত চালু রাখতে হবে। তদন্ত করে দেখতে হবে এখানে যারা ভাঙলো তারা কারা? তাদের উদ্দেশ্যটা কী ছিল? তারা কেন ভাঙল?”
দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের মাননীয় একজন সংসদ সদস্য বললেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের লোক নাকি তাকে বলেছে- ‘আমরা তদন্ত করব কি? প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেছেন।’… কিন্তু যে ভেঙেছে তারও নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য ছিল। এখানে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো কর্মকর্তার তো এই কথা বলার কথা না। এই কথা যেই কর্মকর্তা বলেছে, যদি আমি জানতে পারি, তার ব্যাপারেও একটু খোঁজ নিতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “অবশ্যই এখানে দুর্নীতি করলে আমি সেই দুর্নীতি মানতে রাজি না। গরিবদের ঘর করে দেব আর সেখান থেকেও টাকা মেরে খাবে?”
সরকার ভূমিহীন–গৃহহীনদের জন্য এখন কংক্রিটের পিলার এবং স্টিলের ফ্রেম দিয়ে ঘর করে দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেভাবে করে দেব, যাতে চট করে ভাঙতে না পারে। কারণ দরজা, জানালা, ফ্লোর সবকিছু ভাঙা। ছবি দেখলে বোঝা যায়।”