লকডাউন: বৃষ্টিভেজা ছুটির দিনে চলাচল কম

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে মানুষের উপস্থিতি গত কয়েক দিনের তুলনায় কমেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2021, 08:42 AM
Updated : 30 July 2021, 08:47 AM

সকাল থেকে মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, ফকিরেরপুল, বিজয়নগর, শাহজাহানপুর ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা। রিকশা ও ভ্যান চলতে দেখা গেলেও যাত্রী তেমন নেই; ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও আগের দিনের চেয়ে অনেক কম।

শান্তিনগর বাজারের কাছে মূল রাস্তার পাশে তরকারি, ফলমূল বিক্রি করতে দেখা গেল। সেখানেও ক্রেতা নেই খূব একটা।

সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা জোনাব আলী বললেন, “আজকে রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যে আসলেই লকডাউন হচ্ছে।  আপনি মনে করে দেখেন গতকাল ঢাকার রাস্তার অবস্থাটা কেমন ছিল। এই শান্তিনগরের মোড়ে গতকালও যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে পুলিশকে। আজ কিন্তু সেটা নেই।

কাকরাইলের মোড়ে দেখা গেল খালি রিকশা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় ৭-৮ জন চালক। তাদের মধ্যে মালেক নামে একজন বললেন, “ছুটির দিন। খ্যাপ নাই, ৩-৪ ঘণ্টায় ইনকাম হইছে মাত্র ৪০ টাকা। কেমনে চলমু সারাদিন, আল্লাহ মাবুদ জানে!”

তবে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের কাছে দেখা গেল অ্যাম্বুলেন্সের লম্বা লাইন। সকাল ১০টায় হাসপাতালের কাছে রিকশার জটলাও দেখা গেছে।

সোহরাব উদ্দিন নামের একজন বললেন, “কয়েকদিন ধরে জ্বর আমার ছোট মেয়েটার। আজ হাসপাতালে ভর্তি করলাম।”

লকডাউনের মধ্যেও রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তার মধ্যে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ফলে হাসপাতালগুলোর কাছে মানুষজনের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি। রিকশার ভিড়ও সেখানে বেশি দেখা যায়।

পল্টন মোড়, বিজয়নগর সড়কে যেসব চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, সেগুলো শুক্রবার সকালে ফাঁকা দেখা গেল। যানবাহন চলাচল কম থাকায় পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছিলেন পুলিশ বক্সে।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, “সকাল থেকেই ডিউটিতে। এখন বাজে সাড়ে ১০টা। ২-৩টা প্রাইভেটকার থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে জরিমানা করা হয়নি। ছুটির দিন সেজন্য রাস্তায় গাড়ির চাপ নেই।”

মিরপুরের কালশি এলাকার রাস্তাঘাটও সকালে অনেকটাই ফাঁকা ছিল। তল্লাশি চৌকিগুলোতে পুলিশের তৎপরতা ছিল শিথিল।

ষাট ফুট, মনিপুর, স্টেডিয়াম, মিরপুর ১০, মিরপুর ২, মিরপুর ১ এলাকায় রিকশাচালকদের অলস বসে থাকতে দেখা গেছে।

বারেক মোল্লার মোড়ে একজন রিকশাচালক জানালেন, সকালে শ্যামলী থেকে যাত্রী নিয়ে এসেছেন তিনি। এরপর আর কাউকে পাননি।

ওই এলাকার মিঠাই মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে মিষ্টি কিনে মোটর সাইকেলে আত্মীয়র বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শফিকুল ইসলাম। জানালেন, যাত্রাবাড়ী থেকে তিনি এসেছেন, পথে কয়েক জায়গায় পুলিশের তল্লাশি চৌকি থাকলেও খুব একটা দাঁড়াতে হয়নি।

“একদিকে বৃষ্টি, আরেকদিকে শুক্রবার। তাই আজকে পুলিশি তৎপরতা একটু শিথিল,” বললেন শফিকুল।

এদিন মিরপুরে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মত। মিরপুর পোস্ট অফিসের সামনে আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অন্তত সাতটি অ্যাম্বুলেন্সকে সাইরেন বাজিয়ে ছুটতে দেখা গেছে।

কালশী, মিরপুর ১১ ও ১২ নম্বরের প্রধান সড়ক সংলগ্ন গলিগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে মানুষের চলাচল থাকলেও অন্যদিনের মত ভিড় দেখা যায়নি। বিক্রেতারাও বললেন, ছুটির দিন হলেও ঝিরিঝিরি বৃষ্টির কারণে তারা ক্রেতা কম পাচ্ছেন।                                                                                                                                           

ক্রেতা কম থাকলেও সকালে মিরপুর ১২ নম্বরের ডি-ব্লক পানির ট্যাংক এলাকায় সব ধরনের দোকানই খোলা দেখা গেল। লকডাউনে বন্ধ রাখার কথা থাকলেও এসব দোকান শাটার অর্ধেক খোলা রেখেই চলছিল।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে পুলিশের টহল গাড়ি দেখে তড়িঘড়ি সব দোকান বন্ধ করতে দেখা যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়।

এ এলাকার লামিয়া বুটিক হাউজের মালিক লোকমান আফ্রাদ বললেন, “শুক্রবার কিছু কাস্টমার আসে দেখে দোকান খুলছি। এতদিন তো দোকান বন্ধ রেখে চলা যায় না। পুলিশ টহল দিলে বুঝেশুনেই চালাতে হয়।”

ডি-ব্লক মসজিদের সামনে ভ্যানে মাছ বিক্রি করছিলন লোকমান হোসেন নামের এক বিক্রেতা। তিনি জানালেন, ডি-ব্লক লেডিস মার্কেটের গলিতে তিনি নিয়মিত মাছ বিক্রি করতেন। বৃহস্পতিবার পুলিশ সদস্যরা তাকে সতর্ক করে দিয়েছেন। সেজন্য এখন তিনি ভ্যানে বিক্রি করছেন।

পুরান ঢাকার, আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশিবাজার, ও পলাশীর অলিগলিতে মানুষ, ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে। ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও সাত মসজিদ রোড এলাকাতেও মানুষের আানাগোণা ছিলো চোখে পড়ার মত।