লকডাউনে যাত্রী খরায় রিকশাচালকদের আরেকটি দিন

মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের চারদিকের সড়কেই দুপুর ১২টার দিকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেল শ’খানেক পায়ে চালিত রিকশা; এসবের ফাঁকে দুচারটি ব্যাটারি চালিত রিকশাও ছিল।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2021, 05:21 PM
Updated : 3 July 2021, 05:21 PM

শনিবার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে শুরু হওয়া সাত দিনের কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনের এই দুপুরে বাইরে জনচলাচল তেমন না থাকায় রিকশাচালকদের অপেক্ষা শুধুই বেড়েছে।

শুধু এই সময় নয়, দিনভর রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকেই যাত্রী পাননি।

অথচ রাজধানীর ব্যস্ততম এই সড়কের পরিবেশ এমন নিরিবিলি দেখতে পাওয়া যেমন বিরল ঘটনা, তেমনি একসঙ্গে এত রিকশার অপেক্ষার দৃশ্যটিও সচরাচর ঘটে না বলেই চালকদের সঙ্গে কথা বলে মনে হল।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে কথা হয় রিকশা চালক রফিকুলে সঙ্গে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল ৭টায় বের হয়ে মিরপুর এলাকায় স্বল্প দূরত্বে তিনটি খেপ মেরে দেড়শ টাকা রোজগার করতে পেরেছেন। এরপর বেলা ১০টা থেকে ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় বসে আছেন যাত্রীর আসায়।

“অন্যদিন গোল চত্বরে কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই পুলিশ আমাদের তাড়িয়ে দিত। এখন পুলিশও কিছু বলছে না, যাত্রীও আসছে না। মাঝে মধ্যে দুয়েকজন যাত্রী আসলেও কাড়াকাড়ি করে ‘কম দামে’ রিকশায় তুলে নিচ্ছেন কেউ কেউ।”

মহামারীর নতুন ঢেউ সামাল দিতে চলমান সর্বাত্মক   লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকলেও এবার রিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

তবে জরুরি কারণ ছাড়া কারও ঘরের বাইরে যেতে কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় রিকশাচালকদের লকডাউনের তৃতীয় দিনটিও কেটেছে হতাশায়।  

এদিন রাজধানীর সড়কগুলোতে প্রচুর রিকশা দেখা গেলেও যথারীতি যাত্রী কিংবা পথচারীর সংখ্যা ছিল খুবই কম।

বছর দুয়েক আগে এক দূরারোগ্য রোগের কারণে বাম পায়ের উরু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক সোহেলের। তবুও সংসার চালাতে তাকে এখনও অটোরিকশা চালাতে হচ্ছে।

হতাশ কণ্ঠে সোহেল বলেন, “এবারের লকডাউনে বেশ কড়াকড়ি। ছোটখাটো প্রয়োজনে মানুষ একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে পারছে না।

“পুলিশ রিকাশা চলতে দিলেও অনেক সময় যাত্রীদের নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, থানায় নিয়ে যাচ্ছে। সেই আতঙ্কে মানুষ রাস্তায় নামছে না।“

এদিন মিরপুর ১০ নম্বর থেকে মিরপুর ১ নম্বর চত্বর হয়ে টোলারবাগ পর্যন্ত সড়কে বিপুল পরিমাণ রিকশার উপস্থিতি দেখা গেলেও সেই তুলনায় পথচারীর উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা।

মিরপুর ১ নম্বর গোল চত্বর থেকে কল্যাণপুর, শ্যামলীর মত দূরত্বে অপরিচিত দুই যাত্রীকে দেখা গেছে ভাগাভাগি করে রিকশায় চড়তে। চালকরা ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছিলেন রিকশায়।

এখানকার রিকশাচালক রনি বলেন, “আজকে সকালে ছয়শ টাকা খরচ করে রিকশা মেরামত করে রাস্তায় নামলাম। দুপুর পর্যন্ত মাত্র একশ টাকা রোজগার হয়েছে। পরিস্থিতি তো খুবই খারাপ।“

দুপুরে মিরপুর চিড়িয়াখানার কাছে একটা রিকশা গ্যারেজের প্রবেশ মুখে গোটা দশেক রিকশাকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। এদের অনেকেই সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। কিন্তু যাত্রীর আকাল দেখে তারা গ্যারেজে ফিরে এসেছেন বলে জানালেন।

মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা কলোনীর কাছে একজন রিকশাচালক বলেন, এবারের লকডাউনে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি কড়াকড়ি চলছে। পুলিশের সাথে এবার সেনাবাহিনীর লোকও রাস্তায়। মানুষ ভয়ে বের হচ্ছে না, যাত্রী নেই।

শরীফুল উল্লাহ নামের একজন যাত্রী জানান, সকালে মালিবাগ থেকে হেঁটে পল্টন যাওয়ার পথে রিকশাচালকরা তাকে ডেকে রিকশায় তুলে নিলেন। নিজে থেকেই ভাড়া চেয়েছেন ২০ টাকা ভাড়া। অথচ নিয়মিত ভাড়া অনেক বেশি।

লকডাউনের প্রথম দুদিনে অকারণে বাইরে বের হওয়ার অপরাধে কয়েকশ মানুষ আটক কিংবা গ্রেপ্তারের শিকার হলেও তৃতীয় দিন সংখ্যাটি কমে এসেছে। তবে গত দুই দিনের মতোই পুলিশের তল্লাশি অব্যাহত ছিল।

মিরপুর-২ নম্বর এলাকায় একটি তল্লাশি চৌকির পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল ‍দুপুরে জানান, তারা রিকশা, মটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন থামিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছেন। যৌক্তিক কারণ থাকলে সবাইকেই যেতে দেওয়া হচ্ছে।

মূলত চলাচলে এই কড়াকড়ির প্রভাব পড়েছে রিকশাচালকদের যাত্রী পেতে। এই চিত্র শুধু মিরপুর এলাকার সড়কের নয়, পুরো রাজধানী ঢাকার।

আরও পড়ুন: