জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই গ্রেপ্তার-মামলা: ডিএমপি

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হলেই তার বিরুদ্ধে মামলা, এমনকি গ্রেপ্তারও করা হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ- ডিএমপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2021, 07:12 AM
Updated : 30 June 2021, 08:38 AM

বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, “যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে প্রথম দিনে ৫০০০ মামলা ও গ্রেপ্তার করতে হচ্ছে, আমরা তাও করব।”

তিনি বলেন, “কেউ বিধি-নিষেধ ভঙ্গ করলে দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তায় কোনো ব্যক্তিগত যানবাহনও চলবে না। শুধু রিকশা চলতে পারবে।”

১৮৮০ সালের দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি বেআইনিভাবে বা অবহেলা করে এমন কোনো কাজ করেন, যা জীবন বিপন্নকারী মারাত্মক কোনো রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও বা বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও তা করেন, তাহলে তাকে ছয়মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, বা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার ঘোষিত জরুরি সেবার যানবাহন বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানান পুলিশ কমিশনার।

তিনি বলেন, চিকিৎসা এবং ব্যাংকিংয়ের মতো সেবায় যারা জড়িত তাদের সরকারি যানবাহন থাকলে সেটি তারা ব্যবহার করতে পারবেন, না থাকলে ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করবেন। প্রয়োজনে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করবেন।

সরকারের নির্দেশনায় শিল্প কারখানা খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। কারখানার কর্মীরা কিভাবে যাতায়াত করবেন জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, প্রয়োজনে শিল্প মালিকরাও রিকশা ব্যবহার করবেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, মহামারী পরিস্থিতিতে রিকশা সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ। কাছের বাজার থেকে মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করবে, প্রয়োজনে রিকশা ব্যবহার করতে পারবে।

বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে বলা হয়, এর বাস্তবায়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে। 

ডিএমপির সংবাদ সম্মেলেনও করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউনে করণীয় বিষয়ে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে।

সেখানে বলা হয়, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরবাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। বাইরে যেতে হলে মাস্ক পরতে হবে।

সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অনলাইনে এবং সরাসরি খাবারের দোকান, হোটেল এবং রেস্তোরাঁয় খাবার বিক্রয় ও সরবরাহ করা যাবে।

জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষিত সরকারি, বেসরকারি, প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা, কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে এবং নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে।

মাস্ক পরার জন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা) কাঁচাবাজার খোলা থাকবে।

ওষুধ কেনা কিংবা কাঁচাবাজার করার জন্য যানবাহন হিসেবে শুধুমাত্র রিকশা ব্যবহার করা যাবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীরা পাসপোর্ট, টিকেট প্রদর্শন করে যাতায়াত করতে পারবেন।

বর্জনীয় বিষয়ের তালিকায় ডিএমপি জানায়, অপ্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া পরিহার করতে হবে। সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রাখতে হবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না।

সকল শপিং মল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। হোটেল, রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া যাবে না। কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁয় এর ব্যত্যয় দেখা গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনসমাগম হয় এ ধরনের কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। মহল্লা বা অলিগলিতে চায়ের দোকান ও পান-বিড়ির দোকান বন্ধ থাকবে। কোনো ধরনের আড্ডা কিংবা গণজমায়েত করা যাবে না।

পুলিশের পক্ষ থেকে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তারও একটি তালিকা দিয়ে ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা মহানগরীর প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে পুলিশি টহল বাড়ানো হবে।

ঢাকা মহানগরীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট জোরদার করা হবে। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের ডিএমপি অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী গ্রেপ্তার ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ক্ষেত্র বিশেষে ট্রাফিক আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ২৬৯ ধারা অনুসারে গ্রেপ্তারসহ নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।

এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় পুলিশের সহায়তা থাকবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।