চলে গেলেন ইউপিএল প্রতিষ্ঠাতা মহিউদ্দিন আহমেদ

দেশে বই প্রকাশে ‘বিরল অবদান’ রাখা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)’ এর প্রতিষ্ঠাতা মহিউদ্দিন আহমেদ আর নেই।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2021, 05:27 AM
Updated : 18 Dec 2021, 08:14 PM

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ মহিউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার গভীর রাতে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

তার মেয়ে ইউপিএলের পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন জানান, রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে তার বাবা মারা যান। কিছুদিন আগে তিনি কোভিড সেরে উঠেছিলেন।

মাহরুখ বলেন “দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর বাবা পারকিনসন্সে ভুগছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতাও ছিল। এভারকেয়ার হাসপাতালে কিছুদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।”

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গুলশানের আজাদ মসজিদে জোহরের নামাজের পর মহিউদ্দিন আহমেদের জানাজা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউপিএলের প্রতিষ্ঠাতা মহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবংতার পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

১৯৪৪ সালে ফেনীর পরশুরামে জন্মগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করেন।

পরে পাকিস্তান কাউন্সিল স্কলারশিপ নিয়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়তে যান। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষে তিনি পাকিস্তান টাইমসে শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন।

অ্যারিজোনার বেনসনে অবস্থিত ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি’র আন্তর্জাতিক কার্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে মহিউদ্দিন আহমেদকে ‘পাবলিশিং ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে ‘কালচারাল ডক্টরেট’ ডিগ্রি দেওয়া হয়। তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের (ওইউপি) পাকিস্তান শাখার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

দেশে ফিরে দুই বছর ওইউপি ঢাকা শাখার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৫ সালে ওইউপির ঢাকা কার্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে মহিউদ্দিন আহমেদকে করাচি শাখায় ‘এডিটর-অ্যাট-লার্জ’ বা রোভিং এডিটর হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

কিন্তু করাচিতে একজন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বাস করার প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে তিনি নিজের প্রকাশনা সংস্থা ‘ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন।

ইউপিএল প্রধানত পাঠ্যবই ও গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করে। বাংলাদেশি লেখক ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত লেখক ও শিক্ষাবিদদের রচিত বিভিন্ন বই ও গবেষণা তিনি প্রকাশ করেছেন।

মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ১৯৮১ সাল থেকে মোট ১৬ বার ‘জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র’ পুরস্কার লাভ করে ইউপিএল। ১৯৯১ সালে তিনি স্বর্ণপদকে ভূষিত হন।

পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ১৭ জন প্রকাশককে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান, মহিউদ্দিন ছিলেন তাদের একজন।

২০১২ সালে মহিউদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশ করেন।

বাংলা ভাষার পাশাপাশি ভারত (পেঙ্গুইন) ও পাকিস্তানে (ওইউপি) ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় বইটি প্রকাশের ব্যবস্থাও করেন তিনি।

২০১৪ সালে বাংলাদেশ ‘অ্যাকাডেমিক অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে তাকে ‘ইমেরিটাস পাবলিশার’ পদবি দেওয়া হয়।

প্রকাশনার পাশাপাশি মহিউদ্দিন আহমেদ নিজেও লেখালেখি করেছেন। ইউপিএল থেকে প্রকাশিত সমকালীন গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধের সংকলন সম্পাদনা করেছেন তিনি।