মহামারী ঠেকাতে ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার মহানগর ও জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে।
সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করা বাসগুলোতে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। এখান থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে চালক, হেলপার এবং যাত্রীদের মুখে মাস্ক দেখা গেছে।
শিয়া মসজিদ-বনশ্রী রুটের আলিফ পরিবহন বাসের চালক আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাত্রী অহনও কম। আমাগো মাস্ক ছাড়া মানুষ উডাইতে মানা করছে। আমরা উডাইতেছি না। সেনিটাইজারও রাখছি।”
দীপন পরিবহনের চালক মোশারফ বলেন, “লকডাউনের কারণে আমাদের পরিবার নিয়ে চলতে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। এখন আমরা বাস চালানোর সুযোগ পেয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা যাত্রী পরিবহন করছি এবং করব।”
গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে আজিমপুর থেকে ঠিকানা পরিবহন, দেওয়ান পরিবহন ও ভিআইপি পরিবহনসহ কয়েকটি বাস সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে।
দেওয়ান পরিবহনের চালক আলাউদ্দিন বলেন, “যাত্রী অনেক কম। হয়তো বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী পাব। তবে অর্ধেকের বেশি আসনে আমরা যাত্রী উঠাচ্ছি না এবং স্বাস্থ্যবিধি মানছি।”
তবে যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মানা হবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ কছেন কেউ কেউ।
যাত্রী কম থাকায় আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন মতিঝিলগামী কাজল মিয়া। তিনি বলেন, “এখন মানুষ কম সেজন্যই হয়তো বাসে ফাঁকা ফাঁকা বসানো হচ্ছে। যাত্রী বাড়লে বাসের লোক নিয়ম মানবে বলে মনে হয় না।”
মিরপুর দুয়ারিপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নিউ মার্কেট, আজিমপুর ও গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে আশির্বাদ ও বিহঙ্গ বাস সার্ভিস ছেড়ে যেতে দেখা যায়। সকালে যাত্রী সংখ্যা কম থাকলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সেটাও বেড়েছে।
বাসে দুই সিটে একজন যাত্রী নিতে দেখা গেছে। কয়েকটি বাসের হেলপারের হাতে স্যানিটাইজার দেখা গেলেও বেশিরভাগের মাস্ক দেখা যায়নি। বেশিরভাগ তবে চালকদের মুখে মাস্ক দেখা গেছে।
নিউ মার্কেট যেতে বাসের অপেক্ষায় থাকা দুলাল বলেন, “হেলপাররা সকল যাত্রী স্পর্শ পায়, তারাই বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। তাই তাদের অবশ্যই নিরাপদে থাকতে মাস্ক পরা জরুরি।”
গাড়ির চাপ বাড়ায় যানজটে ভোগান্তি
গণপরিবহন চালু হওয়ায় অন্যদিনের চেয়ে বাস, প্রাইভেট কার, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও রিকশার সংখ্যা বেড়ে সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা, গুলশান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
মহাখালীর সিএনজি চালক শামসু মিয়া বলেন, “গত কয়েকদিন যাবতই রাস্তায় গাড়ি বেশি। আজকে সিটি সার্ভিস নামায় আমরা খুব বেকাদায় পড়েছি। মহাখালী থেকে গুলিস্তানে একজন যাত্রীকে নিয়ে গেছি দেড় ঘণ্টায়।”
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। বন্ধ করা হয় সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রী পরিবহন।
পরে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে মহানগর ও জেলায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ।
নির্দেশনায় বলা হয়, আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। কোনোভাবেই মোট আসনের অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। সমন্বয় করে ৬০ শতাংশ বাড়ানো ভাড়ার বেশি আদায় করা যাবে না।
যাত্রার শুরু ও শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। চালক, অন্যান্য শ্রমিক, কর্মচারী ও যাত্রীদের মাস্ক পরা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয় প্রজ্ঞাপনে।