গণপরিবহনের সঙ্গে ফিরল ঢাকার নিত্য যানজট

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে রাজধানীর সড়কে বাসের সংখ্যা খুব বেশি না থাকলেও ব্যক্তিগত পরিবহনসহ অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে বাস যোগ হওয়ায় দেখা মিলেছে নিত্যকার যানজটের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2021, 07:19 AM
Updated : 6 May 2021, 07:38 AM

মহামারী ঠেকাতে ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার মহানগর ও জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। 

সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করা বাসগুলোতে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। এখান থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে চালক, হেলপার এবং যাত্রীদের মুখে মাস্ক দেখা গেছে।

শিয়া মসজিদ-বনশ্রী রুটের আলিফ পরিবহন বাসের চালক আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাত্রী অহনও কম। আমাগো মাস্ক ছাড়া মানুষ উডাইতে মানা করছে। আমরা উডাইতেছি না। সেনিটাইজারও রাখছি।”

দীপন পরিবহনের চালক মোশারফ বলেন, “লকডাউনের কারণে আমাদের পরিবার নিয়ে চলতে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। এখন আমরা বাস চালানোর সুযোগ পেয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা যাত্রী পরিবহন করছি এবং করব।”

করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে চলমান লকডাউনের মধ্যে রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল শুরুর দিন সকালে রাজধানীর বনানী এলাকায় বিমানবন্দর সড়কে যানবাহনের চাপ ছিল স্বাভাবিক দিনের মতোই। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দুই সিটে একজন করে যাত্রী বসা দেখা গেছে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি বাসে। সকাল থেকে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম থাকায় পরিবহনের চালক ও হেলপাররা অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন না।

গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে আজিমপুর থেকে ঠিকানা পরিবহন, দেওয়ান পরিবহন ও ভিআইপি পরিবহনসহ কয়েকটি বাস সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে।

দেওয়ান পরিবহনের চালক আলাউদ্দিন বলেন, “যাত্রী অনেক কম। হয়তো বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী পাব। তবে অর্ধেকের বেশি আসনে আমরা যাত্রী উঠাচ্ছি না এবং স্বাস্থ্যবিধি মানছি।”

তবে যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মানা হবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ কছেন কেউ কেউ।

রাজধানীর আজিমপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে গণপরিবহন চলাচলের চিত্র। লকডাউনের কারণে ২০ দিন বন্ধ থাকার পর ৬ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীসহ সারাদেশের জেলার ভেতরে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয় সরকার। ছবি: কামাল হোসাইন তালুকদার

মোহাম্মদপুরে আলিফ পরিবহনের যাত্রী আনিকা মিসকাত বলেন, “ভাড়া বেশি নিলেও বাস চলাচল শুরু হওয়ায় আমাদের জন্য ভালোই হয়েছে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বিধি কতক্ষণ এরা মানবে সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।”

যাত্রী কম থাকায় আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন মতিঝিলগামী কাজল মিয়া। তিনি বলেন, “এখন মানুষ কম সেজন্যই হয়তো বাসে ফাঁকা ফাঁকা বসানো হচ্ছে। যাত্রী বাড়লে বাসের লোক নিয়ম মানবে বলে মনে হয় না।”

মিরপুর দুয়ারিপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নিউ মার্কেট, আজিমপুর ও গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে আশির্বাদ ও বিহঙ্গ বাস সার্ভিস ছেড়ে যেতে দেখা যায়। সকালে যাত্রী সংখ্যা কম থাকলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সেটাও বেড়েছে।

বাসে দুই সিটে একজন যাত্রী নিতে দেখা গেছে। কয়েকটি বাসের হেলপারের হাতে স্যানিটাইজার দেখা গেলেও বেশিরভাগের মাস্ক দেখা যায়নি। বেশিরভাগ তবে চালকদের মুখে মাস্ক দেখা গেছে।

নিউ মার্কেট যেতে বাসের অপেক্ষায় থাকা দুলাল বলেন, “হেলপাররা সকল যাত্রী স্পর্শ পায়, তারাই বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। তাই তাদের অবশ্যই নিরাপদে থাকতে মাস্ক পরা জরুরি।”

লকডাউনের কারণে ২০ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীতে চলছে গণপরিবহন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এছাড়া বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী লেগুনাগুলোর হেলপার হিসেবে ১০-১৫ বছর বয়সী শিশুদের কারও মুখে মাস্ক বা বা হাতে স্যানিটাইজার দেখা যায়নি। তবে যাত্রীদের কম দেখা থাকায় কিছুটা দুরত্ব মেনে বসতে দেখা গেছে।

গাড়ির চাপ বাড়ায় যানজটে ভোগান্তি

গণপরিবহন চালু হওয়ায় অন্যদিনের চেয়ে বাস, প্রাইভেট কার, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও রিকশার সংখ্যা বেড়ে সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা, গুলশান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।

করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে চলমান লকডাউনের মধ্যে রাজধানীর বনানী এলাকায় বিমানবন্দর সড়কে বৃহস্পতিবার সকালে গণপরিবহন চলাচলের চিত্র। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

গুলিস্তান থেকে গুলশানে আসা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমি জানতাম আজকে গণপরিবহন নামবে। সেজন্য সকাল সকালে বেরিয়েছি বাসা থেকে। কিন্তু যে অবস্থা দেখলাম পথে পথে যানজট। আমার গুলশানে আসতেই পাক্কা এক ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় লেগেছে।”

মহাখালীর সিএনজি চালক শামসু মিয়া বলেন, “গত কয়েকদিন যাবতই রাস্তায় গাড়ি বেশি। আজকে সিটি সার্ভিস নামায় আমরা খুব বেকাদায় পড়েছি। মহাখালী থেকে গুলিস্তানে একজন যাত্রীকে নিয়ে গেছি দেড় ঘণ্টায়।”

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। বন্ধ করা হয় সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রী পরিবহন।  

চলমান লকডাউনের মধ্যে রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল শুরুর দিন সকালে রাজধানীর কাকলী মোড়ে ঝুঁকি নিয়ে বাসে উঠছেন এক যাত্রী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সম্প্রতি দোকান-পাট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা হয়। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালুর দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ করেন সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা।

পরে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে মহানগর ও জেলায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ।

নির্দেশনায় বলা হয়, আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। কোনোভাবেই মোট আসনের অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। সমন্বয় করে ৬০ শতাংশ বাড়ানো ভাড়ার বেশি আদায় করা যাবে না।

যাত্রার শুরু ও শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। চালক, অন্যান্য শ্রমিক, কর্মচারী ও যাত্রীদের মাস্ক পরা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয় প্রজ্ঞাপনে।