সাধারণ ছুটি ঘোষণার ভাবনা নেই: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করলেও সাধারণ ছুটি ঘোষণার চিন্তা-ভাবনা আপাতত নেই বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2021, 11:13 AM
Updated : 29 March 2021, 03:12 PM

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ১৮টি নির্দেশনা জারি করার পর সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা সাংবাদিকদের শুনিয়ে বলেন, আগের অভিজ্ঞতা থেকেই এসব নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

সাধারণ ছুটি দেওয়ার কোনো চিন্তা-ভাবনা সরকারের আছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এ পর্যন্ত আমাদের এ রকমের কোনো সিদ্ধান্ত নেই, সাধারণ ছুটি দেওয়ার ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।

“আমারা সবাই কাজ করেছি, সাংবাদিকরা মাঠে ছিলেন, অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে সতর্ক থাকায় এখন পর্যন্ত ভাল আছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের কার্যক্রম চলতে থাকবে। এখন পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বা ওই ধরণের চিন্তা-ভাবনা নেই। তবে আমরা সতর্ক হলে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।”

১৮ দফা নির্দেশনার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এ নির্দেশনা পালনে অর্থাৎ এ মুহূর্ত থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা এ সিদ্ধান্তগুলো প্রতিপালন করব। তারপর আমরা দেখব অবস্থা কি। পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধান্ত দেব। এ মুহূর্ত থেকে আমরা ধরে নিলেও আগামী ১৪ দিন অর্থাৎ ১১ বা ১২ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।”

আগামী ১১ এপ্রিল বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ভোট আছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটের লাইনে দাঁড়াতে হবে। আমরা ওখানে কর্মকর্তাদের বলে দেব, স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ভোট হবে।”

আগামী মাসে অনুষ্ঠিয় এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, “সব কাজই করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। বইমেলাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে।”

পহেলা বৈশাখ উদযাপনে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। ছোট পরিসরে কিন্তু কাজ করেছি এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা চলব।”

নতুন নির্দেশনায় কওমি মাদরাসাগুলো বন্ধ থাকবে কিনা প্রশ্নে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা এখানে উল্লেখ করে দিয়েছি প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদরাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। কোনো রকম শিক্ষার্থী আপাতত আসবে না। তবে অনলাইনে ক্লাস চলবে।

“মাদরাসার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। এখানে কওমি না, সব মাদরাসা, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা সব জায়গায় বন্ধ থাকবে। কারণ এটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা যদি রোধ করতে না পারি তাহলে সমস্যা হবে।”

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমার কাছে রিপোর্ট আছে আমার এলাকায় যারা ইসলামিক ওয়াজে উপস্থিত ছিলেন তারা অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা হচ্ছে একটা ভাইরাস, সেটা কাউকে ছাড়বে না। কেউ অন্য কিছু বিশ্বাস করে যদি করোনাকে ভয় না করেন, ভয় না পাওয়া অযৌক্তিক, আপনাকে অবশ্যই সুরক্ষায় রাখতে হবে।”

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গতবছর ২৩ মার্চ প্রথমবারের মত ‘সাধারণ ছুটির’ ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। শুরুতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘ছুটি’ ঘোষণা হলেও পরে তার মেয়াদ বাড়ে কয়েক দফা। ছুটির মধ্যে সব কিছু বন্ধ থাকার সেই পরিস্থিতি ‘লকডাউন’ হিসেবে পরিচিত পায়।

এ বছর ভাইরাসের সংক্রমণ ভাড়তে থাকার মধ্যে কয়েকদিন আগে সাধারণ ছুটি ঘোষণার গুজব ছড়ায়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে নতুন এই ভাইরাস শনাক্তের পর ১৮ মার্চ থেকে কওমি মাদরাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও পরে কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়া হয়।

চলতি মাসে ৩০ তারিখ থেকে স্কুল-কলেজ খোলার কথা থাকলেও সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সেই সময় পিছিয়ে ২৩ মে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

এমন পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জনসমাগম সীমিতকরাসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার।