তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়।
আদালত বলেছে, কিশোর যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন এবং এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান নিম্ন আদালত ও হাই কোর্টের এই বেঞ্চ থেকে জামিন পেয়েছেন, সেই বিবেচনায় আহমেদ কবির কিশোরকে ছয় মাসের জামিন দেওয়া হল।
আদালতে কিশোরের জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
আইনজীবী জ্যেতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আহমেদ কবির কিশোরের নামে আর কোনো মামলা নেই। ফলে তার মুক্তি পেতে বাধা নেই। এ প্রক্রিয়াটি দুই-তিনদিনের মধ্যেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হবে।”
ডিএজি বাপ্পী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ১০ মাস ধরে কারাগারে আছেন। মূলত এই বিবেচনায় তাকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছে আদালত। মামলাটির যে পুনঃতদন্ত চলছে, আগামী ১৫ মার্চ তার প্রতিদেবন জমা দেওয়ার তারিখ রয়েছে।”
রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে কিশোরের জামিনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল কিনা এবং এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করবে কিনা জানতে চাইলে এ আইন কর্মকর্তা বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার সর্বশেষ অবস্থাটা আদালতে তুলে ধরেছে। আর আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে কিনা সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এ মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়। আহমেদ কবির কিশোরের পাশাপাশি মুশতাক আহমেদের জন্যও হাই কোর্টে জামিন চাওয়া হয়েছিল।
হাই কোর্টের আদেশ অনুযায়ী আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এদিন মুশতাকের মৃত্যুর বিষয়টি হলফনামা করে আদালতকে জানানোর পর তার জামিন আবেদনটি বাতিল করা হয়।
মুশতাক ও কিশোরের পক্ষে এর আগে বেশ কয়েকবার জামিনের আবেদন হলেও তা আদালতে নামঞ্জুর হয়।
পরদিন ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জামশেদুল ইসলাম তখন বলেছিলেন, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ নামের ফেইসবুক একাউন্টে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। আর মুশতাক তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন।
র্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিকের করা এই মামলায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে এ দুজন জামিনে মুক্তি পেলেও কিশোর ও মুশতাকের জামিন হয়নি।
এ মামলায় আসামির তালিকায় মুশতাক, কিশোর, দিদার, মিনহাজের সঙ্গে আরও ছিলেন নেত্র নিউজের সম্পাদক সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (আল জাজিরার প্রতিবেদনের স্যামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার।
তদন্তের পর শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে গত জানুয়ারিতে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় রমনা থানা পুলিশ। বাকি আট আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
সেই দায়িত্ব পাওয়ার পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপপরিদর্শক ও মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আফছর আহমেদ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
সে বিষয়ে শুনানি করে ঢাকার একজন মহানগর হাকিম গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কিশেরকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে দেন। আর এ শুনানির আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় মুশতাকের মৃত্যু হয়।
মুশতাকের মৃত্যুতে প্রতিবাদ হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি নতুন করে জোরালো হয়ে উঠেছে। কারাগারে বন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।