সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, যাত্রীরা বিপাকে

লঞ্চ দুর্ঘটনার এক মামলায় আদালত দুই মাস্টারের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ায় ঢাকা সদরঘাটের পন্টুন থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2021, 11:28 AM
Updated : 25 Jan 2021, 03:51 PM

বিআইডব্লিউটিএ এর যুগ্ম-পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, দুই মাস্টার সোমবার জামিনের মেয়াদ বাড়াতে মেরিন কোর্টে গিয়েছিলেন। সেখানে তাদের জামিন না হওয়ায় শ্রমিকরা দুপুরে পন্টুন থেকে লঞ্চ সরিয়ে নেয়।

“চাঁদপুর রুটের লঞ্চ লালকুঠির ঘাট দিয়ে চলাচল করছে। তবে সদরঘাটের মূল পন্টুনের লঞ্চগুলো তারা সরিয়ে নিয়েছে। সেখান থেকে লঞ্চ ছাড়েনি।”

এ অবস্থায় ঘাটে আসা যাত্রীরা পড়েছেন দুর্ভোগের মধ্যে। সঙ্কট নিরসনে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক সন্ধ্যায় মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এক বছর আগে চাঁদপুরের হরিনাঘাটে অ্যাডভেঞ্চার-১ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কেউ মারা না গেলেও লঞ্চ দুটি ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ নিয়ে মেরিন আদালতে যে মামলা হয়েছিল, তাতে দুই লঞ্চের মাস্টার রুহুল আমিন ও জামাল উদ্দিন জামিনে ছিলেন। সোমবার তারা সেই মামলায় হাজিরা দিতে গেলে আদালত জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

এর প্রতিবাদেই নৌ শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে গেছে জানিয়ে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী বলেন, “কোথায় দুর্ঘটনায় ঘটেছে, তার হদিস নেই, চার মাস এই দুজনের সার্টিফিকেট 'হোল্ড' করে রাখা হয়েছিল। জামিন না দেওয়ায় কোনো কারণ ছিল না। শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানাতে ঘাট থেকে লঞ্চ সরিয়ে নিয়েছে।”

রাতে লঞ্চ ছাড়বে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা আমার উপর নির্ভর করছে না। শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ।”

সদরঘাট থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, হাতিয়াসহ ৪৩ রুটে প্রতিদিন ৭০টি বেশি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়।

বিআইডব্লিউটিএ এর পরিবহন পরিদর্শক হুমায়ূন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ৩০টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। লালকুঠি ঘাট থেকে বিআইডব্লিটিসির এমভি মধুমতি ছেড়ে যাবে। কিন্তু বিকালে সদরঘাট পন্টুন থেকে লঞ্চ ছাড়েনি। সেখানে কোনো লঞ্চ নেই।”

সদরঘাটে বিআইডব্লিটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকের সঙ্গে লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের বৈঠক

রিয়াদ-৩ লঞ্চের মালিক মো. মামুন বলেন, “আমরা বিব্রত। এইভাবে হঠাৎ করে কিছু না বলে আমাদের লঞ্চগুলো সরিয়ে নিল কেন শ্রমিকরা!”

এদিকে হঠাৎ করে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় ঘাটে এসে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।

একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম রবিন ও তার তিন সহকর্মী তাদের বরগুনা অফিসের কাজে যাওয়ার জন্য সুন্দরবন-৭ লঞ্চের টিকেট কেটেছিলেন। কিন্তু সদরঘাটে এসে তারা জানতে পারেন, লঞ্চ ছাড়বে না।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুন্দরবন গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম ঝন্টু বলেন, “উনাদের টাকা বিকাশের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হবে।”

দক্ষিণ জনপদের বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা হওয়ার জন্য যারা সদরঘাটে এসেছিলেন, তাদের অনেককে সন্ধ্যার পরও লঞ্চ ছাড়ার আশায় পন্টুনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

সদরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই পাবেল মিয়া বলেন, “পন্টুনে যতক্ষণ যাত্রী থাকবে, ততক্ষণ তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তবে যাত্রীদের আমরা চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।”