দুদকের মামলায় ইশরাক খালাস

সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে দুদকের করা মামলা থেকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে খালাস দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2020, 09:00 AM
Updated : 23 Nov 2020, 12:08 PM

ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বলা হয়, সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করার নোটিস যথানিয়মে জারি না হওয়ায় এবং রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইশরাককে খালাস দেওয়া হল।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইশরাক আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের বলেন, “এক-এগারোর অবৈধ সরকারের সময়ে আমাকে নোটিস দেওয়া হয়। তখন আমি ছাত্র, দেশে ছিলাম না।… আমি বলব যে রায়ের মাধ্যমে জনগণের বিজয় হয়েছে।”

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন।

তার অন্যতম আইনজীবী নূরুজ্জামান তপন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জানতাম, এমন রায়ই আসবে। ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলার রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি।” 

দুদকের আইনজীবী আলী হায়দার চৌধুরী এজলাসে না থাকায় রায়ের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

কী ছিল মামলায়?

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইশরাক হোসেন এবং তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সম্পদের বিবরণী দখিল করার জন্য নোটিস দিয়েছিল দুদক।

ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর দুদকের কনস্টেবল তালেব কমিশনের নোটিসটি নিয়ে ইশরাকের বাসায় যান। কিন্তু ইশরাক তখন বাসায় না থাকায় উপস্থিত চারজনের (সাক্ষী) সামনে বাসার নিচতলায় প্রবেশ পথের পাশে দেয়ালে টেপ দিয়ে সেই নোটিস ঝুলিয়ে দিয়ে আসেন বলে উল্লেখ করা হয় মামলার এজাহারে।

দুদকের বেঁধে দেওয়া ৭ কার্যদিবস সময়ের মধ্যে ইশরাক তার সম্পদের হিসাব নির্ধারিত ফরমে দাখিল না করায় ২০১০ সালের ২৯ অগাস্ট রমনা থানায় মামলা করেন দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক সামছুল আলম।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালতে ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এরপর চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ইশরাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এ মামলার বিচার শুরু করে আদালত। মামলায় ৮ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ছয়জন সাক্ষ্য দেন।

গত ১১ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।

কী বলা হয়েছে রায়ে?

আসামিপক্ষের আইনজীবী নূরুজ্জামান তপন রায়ের পর সাংবাদিকদের, দুদক মামলা করার সময় ইশরাক হোসেনের ঠিকানা হিসেবে রমনার মেয়র হাউজ এবং গোপীবাগের বাসার ঠিকানা দিয়েছিল, কিন্তু নোটিস সেসব ঠিকানায় ‘পাঠানো হয়নি’।  

“ইশরাক তখন দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে এলে থাকতেন গোপীবাগের বাসায়। গোপীবাগের বাসায় কোনো নোটিস পাঠানো হয়নি। রমনা এলাকার ২০ হেয়ার রোডে মেয়র হাউজে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে নোটিস টানিয়ে দেওয়ার কথা মামলায় বলা হয়েছে। কিন্তু এর কোনো নিরপেক্ষ সাক্ষী নেই।”

২৩ পৃষ্ঠার রায়ে বিচারক বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের ৪ নম্বর সাক্ষী দুনীতি দমন কমিশনের পুলিশ সদস্য আবু তালেব বা অপর সাক্ষী গণপূর্তের প্রকৌশলী কবির হোসেন, গণপূর্তের কর্ম সহকারী সামশুদ্দিন- কেউই মামলা প্রমাণে বিশ্বাসযোগ্য কোনো সাক্ষ্য দিতে পারেননি।

“ইশরাকের নামে নোটিস জারির বিষয়ে তারা বিচারকালে নিরেপেক্ষভাবে কিছু বলতে পারেননি।”