‘অর্থ পাচারের’ মামলা হচ্ছে পাপুল-সেলিনা দম্পতির বিরুদ্ধে

মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2020, 09:18 AM
Updated : 10 Nov 2020, 09:18 AM

দুদকের অনুসন্ধানে পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের ব্যাংক হিসাবে ১৪৮ কোটি টাকার ‘অবৈধ লেনদেন ও পাচারের তথ্য’ পেয়ে এ মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কমিশন আজ এই মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করবেন।”

মামলায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুল, তার স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা, শ্যালিকা জেসমিন ছাড়াও মেয়ে ওয়াফা ইসলামকে আসামি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা প্রনব।

পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই সেলিনা ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

ওই দিন দুদক থেকে বেরিয়ে সেলিনা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমাদের কোনো গোপন সম্পদ নেই, অবৈধ সম্পদও নেই।  যা আছে তার বিবরণ দুদককে দিয়েছি। আমরা আইনের পক্ষে। এই তদন্তে দুদককে সব ধরনের সহযোগিতা করব।”

জনশক্তি রপ্তানিকারক পাপুলকে গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন।

সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লক্ষ্মীপুরের আসনটিতে।

ওই নির্বাচনে ওই আসনটি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ মুহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে ‘বিএনপি ঠেকাতে’ স্থানীয় আওয়ামী লীগ পাপুলের পক্ষে কাজ করে বলে দলটির নেতাদের ভাষ্য।

পাপুল নিজে এমপি হওয়ার পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনাকে এমপি করে আনেন।

প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে।

পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশি কমিউনিটির ধারণা।

এই সংসদ সদস্য কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্তে নামে দুদক।

এর অংশ হিসেবে সেলিনা ইসলামকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তলব করা হয়।

কার আগে গত ২২ জুন ওই চারজনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক। পাপুলের স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

পাশাপাশি পাপুল দেশে ফিরলে আর যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেওয়া হয় দুদকের পক্ষ থেকে।