নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের 'প্রমাণ পায়নি' ছাত্র অধিকার পরিষদ

সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে আসা ধর্ষণের অভিযোগ ‘তদন্ত’ করে সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 03:11 PM
Updated : 11 Oct 2020, 03:12 PM

রোববার নিজেদের ‘তদন্ত কমিটি’র প্রতিবেদনের সারমর্ম সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করে ছাত্র পরিষদ দাবি করেছে, বিবাদীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ অভিযোগ তোলা হয়েছে।

এদিকে হাসানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এই তদন্ত প্রত্যাখ্যান করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “ধর্ষণের প্রমাণ আমি পুলিশের কাছেই দিয়েছি। তাদের কাছে কেন প্রমাণ দেব? তাদের এই প্রতিবেদন ভিত্তিহীন।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের ওই ছাত্রী তার বিভাগেরই সদ্য সাবেক ছাত্র হাসানের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন সম্প্রতি।

গত ২১ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় ধর্ষণ, অপহরণ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চরিত্র হননের অভিযোগে দুটি মামলা করেন।

হাসানের পাশাপাশি পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ আনেন ওই ছাত্রী। আর এতে সহযোগিতার অভিযোগে আসামি করা হয় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরসহ পরিষদের আরও তিন নেতাকে।

শুরুতে এই অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করলেও মামলার পর ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে হাসানকে সরিয়ে দিয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করে সংগঠনটি।

তদন্ত কমিটিতে রাখা হয় ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় পরিষদের দুজন যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান ও রাফিয়া সুলতানাকে।

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সুপারিশসহ ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের কাছে জমা দিতে বলা হলেও ১৮ দিন পর বুধবার এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

হাসান আল মামুন

প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগকারী নিজেকে ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী বলে দাবি করলেও ছাত্র অধিকার পরিষদের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমে কখনও তিনি ছিলেন না।

পরিচয় থাকলেও তাদের মধ্যে প্রেমের কোনো সম্পর্ক ছিল না বলে তদন্ত কমিটির কাছে দাবি করেছেন হাসান।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, “একই বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবেই তাদের পরস্পরের পরিচয় হয়। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কের মতো কোন ঘটনা ঘটছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি কোন তথ্য প্রমাণ পায়নি। এমনকি অভিযোগকারীও এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির কাছে কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেনি।”

পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর কখনও সরাসরি দেখা হয়নি দাবি করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মাস তিনেক আগে অভিযোগকারী একবার নুরের কাছে ফোন করে ঢাকায় এসে দেখা করবেন বলে জানালেও আর দেখা করেননি।

ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, ঢাবি শাখার সহসভাপতি নাজমুল হুদা ও আব্দুল্লাহ হিল বাকীকে দিয়ে বাদীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ার কথাও জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কমিটির সদস্য ও পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাদী ও বিবাদী উভয়ের কাছ থেকেই যথাসময়ে সহযোগিতা পাইনি এবং দেখা করতে চাইলেও তারা সাড়া দেয়নি। ফলে ওই সময়টাতে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

“পরবর্তীতে আমরা বাদী ও বিবাদী উভয়ের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই। মামলার এজহারে অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে বাদী ও বাদীর পরিবারের সাথে কথা বলেছি। বিবাদীদের সাথেও কথা বলেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের বোনটি এজহারে যে অভিযোগগুলো করেছেন, তার যথাযথ দলিলাদি বা ডকুমেন্টস আমাদের দিতে পারেননি। যতটকু সম্ভব মৌখিকভাবে বলেছেন। সার্বিকভাবে বাদী ও বিবাদীর বক্তব্য ও ডকুমেন্টসে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।”

পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত কমিটি হাসান আল মামুনের সাথে শারীরিক সম্পর্কের মতো কোনো প্রমাণ পায়নি। আর অন্যদের বিষয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।”

হাসান আল মামুনের বিষয়ে সংগঠনের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যে অভিযোগটি করা হয়েছে, সেটা আদালতের মাধ্যমে সুরাহা হওয়া পর্যন্ত সংগঠনের দায়িত্ব থেকে তার অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।”

এদিকে আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে গত চার দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন করছেন অভিযোগকারী ওই ছাত্রী।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে টানা অনশনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে তাকে শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

সেখানে  চিকিৎসা নেওয়ার পর রাত ২টার দিকে ফিরে আবারও রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেন তিনি। এই সময় তার পাশে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নারীকর্মীসহ তার সহপাঠীরা অবস্থান করেন।

আসামিদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানেই এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

তার পাশে থাকা ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য তিলোত্তমা শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল রাত থেকে মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। গত চার দিন ধরে পরিবার থেকে ডিটাচড।

“আমরণ অনশনে বসার পরও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তবে মেয়েটিও সংকল্পবদ্ধ, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।”