বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ব্রেইল সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বইটির ব্রেইল সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী যে ডায়েরি, সেটা ব্রেইলে প্রকাশ করা হয়েছে যাতে আমাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরাও পড়তে পারে এবং তার সম্পর্কে জানতে পারে। আমি মনে করি এটা একটা মহৎ উদ্যোগ।”
২০১২ সালের জুনে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রথম প্রকাশিত হয়। এরপর ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চীনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কি, নেপালি, স্প্যানিশ, অসমীয়া ও রুশ ভাষায় বইটির অনূদিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “এই বইতে জাতির পিতার জীবনের কথা যেমন আছে, পাশপাশি তার সংগ্রামের অনেক কথা আছে এবং আজকে আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন, সেই আন্দোলনের অনেক তথ্য এখানে রয়েছে। বইটি ইতোমধ্যে ১৪টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে সারাবিশ্বে। আরো কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করার জন্য আমাদের কাছে অনুমতি চেয়েছে।”
জাতির পিতাকে নিজের জীবন নিয়ে লিখতে তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কীভাবে উৎসাহ দিতেন, সেই স্মৃতি স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার মা সব সময় অনুপ্রেরণা দিতেন তিনি যেন তার জীবনীটা লিখে রাখেন। সেই থেকেই তিনি লিখতে শুরু করেন এবং যতবার কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পেতেন, তখন মা জেলগেইটে উপস্থিত থেকে আর কিছু না হোক লেখার খাতাগুলো তিনি সংগ্রহ করে রাখতেন।”
বঙ্গবন্ধুর সেইসব লেখার খাতা ১৯৭১ সালে প্রায় হারাতে বসেছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু সেই সময় আমরা সেটা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলাম। যদিও আমাদের ধানমণ্ডির বাসায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লুটপাট করে। সেখানে সবকিছু লুটপাট করলেও এগুলো যেহেতু একটা লাইনটানা রুলখাতা, এগুলো ওদের নজরে পড়েনি। ওদের কাছে এগুলোর কোনো মূল্য ছিল না। এক সময় সেটা আমি উদ্ধার করে নিয়ে আসি। সেটার বিস্তারিত আমি অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটাতে লিখেছি।”
শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাকে সপরিবারে হত্যার ঘটনাও এ অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
“সেদিন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে খুনিদেরকে বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। আমি দেশে ফিরে আসার পর ওই বাড়িতে আমার ঢোকা নিষেধ ছিল, ঢুকতে পারিনি। সিলগালা দেওয়া ছিল। তখন হঠাৎ করে ১২ জুন তাদের কাছে মনে হল বাসাটা খুলে দেবে।”
তখন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করে জাতির পিতার লেখার খাতাগুলো সংগ্রহ করেন শেখ হাসিনা। কিন্তু অসমাপ্ত আত্মজীবনীর লেখাগুলো সেদিন পাওয়া যায়নি। তবে টাইপ করা পোকায় কাটা কতগুলো কাগজ সেদিন পাওয়ার কথা জানান শেখ হাসিনা।
দীর্ঘদিন পর ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধুর এক ভাগ্নে অতি পুরানো-জীর্ণপ্রায় এবং প্রায় অস্পষ্ট লেখার চারটি খাতা শেখ হাসিনাকে এনে দেন। তিনি ওই খাতা চারটি বঙ্গবন্ধুর আরেক ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণির অফিসের টেবিলের ড্রয়ার থেকে সংগ্রহ করেন। ওই লেখাগুলোই ছিল বঙ্গবন্ধুর হারিয়ে যাওয়া আত্মজীবনীর অংশ।
ধারণা করা হয়, শেখ মণিকে টাইপ করার জন্য খাতাগুলো দেওয়া হয়েছিল। পরে সেগুলো বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার দেওয়া ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নামে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয় ২০১২ সালের জুনে। সেই সঙ্গে বইটি ইংরেজিতেও প্রকাশ করা হয়, যার ভাষান্তর করেন ড. ফকরুল আলম।
অনুষ্ঠানের গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মন্ত্রিপষিদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।