৩ ঘণ্টায় তিন আসামির জবানবন্দি, হাকিমকে হাই কোর্টে তলব

ফরিদপুরের নগরকান্দায় স্কুলছাত্র অন্তর হত্যা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ‘আইন অনুসরণ না করায়’ ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মাইনুল ইসলামকে তলব করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2020, 03:24 PM
Updated : 16 Sept 2020, 03:24 PM

আসামিদের ‘যথাযথ সময় না দিয়ে’ কেন তিনি তিন ঘণ্টা সময়ের মধ্যে তিন জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করলেন, সে বিষয়ে আগামী ৮ অক্টোবর তাকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

এ মামলার দুই আসামির জামিন নাকচের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।

আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও নুসরাত ইয়াসমিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

২০১৮ সালের ৭ জুন তারাবি নামাজ পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয় নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদী পাগলপাড়া গ্রামের আবুল হোসেন মাতব্বরের ছেলে আলাউদ্দিন ওরফে অন্তর।

ওই ঘটনায় নগরকান্দা থানায় একটি জিডি করা হয়। এর মধ্যে ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অন্তরের মায়ের কাছে মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। ১৪ জুন রাতে অপহরণকারীদের বলা জায়গায় মুক্তিপণের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকাও দেন অন্তরের মা।

অপহরণের ২০ দিনের মাথায় ২৭ জুন পাগলপাড়া গ্রামের খালের পাশে মাটিচাপা দেওয়া অন্তরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় অন্তরের মা প্রথমে অপহরণের মামলা করলেও অন্তরের লাশ উদ্ধারের পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।

অন্তরের লাশ উদ্ধারের আগেই এ মামলায় এস এম মাহাবুবুর আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ১৫ জুন খোকন মাতুব্বর, কামাল মাতুব্বর ও সুজন মাতুব্বরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর গতবছরের ৮ জুলাই ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এ মামলার অপর দুই আসামি আজিজুল শেখ ও তার ভাই আশরাফ শেখকে।

এ দুই আসামি ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জামিন আবেদন করলে তা নাকচ হয়ে যায়। সেই আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে জামিন চেয়ে আপিল করেন তারা।

আপিল গ্রহণের শুনানিতে উঠে আসে অন্তর হত্যা মামলায় একদিনে তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার বিষয়টি।

আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৮ সালের ২৮ জুন ম্যাজিস্ট্রেট ১৬৪ ধারায় তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

“একটা বিকাল ৫টায়, একটা ৬টা ৪৫ মিনিটে এবং অপরটি ৭টা ৪০ মিনিটে। আইনের মধ্যে বলা আছে, ১৬৪ ধারার জবানবন্দির জন্য কোনো ব্যক্তিকে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা সময় দিতে হবে। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে এত অল্প সময়ের মধ্যে ৭ পৃষ্ঠার জবানবন্দি লেখা সম্ভব না।

“নথি থেকে দেখা যায়, তিন ঘণ্টার মধ্যেই ওই তিনজনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। আর তিন আসামির জবানবন্দি প্রায় একই রকম। জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আসামিদের তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়নি। আর যেসব আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন, তাদের ভাষায় জবানবন্দি লেখা হয়নি। জবানবন্দিগুলো প্রায় একই রকম।

“তাই আদালত জবানবন্দি রেকর্ডকারী ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্যাখা দিতে তলব করে জানতে চেয়েছেন কেন তিনি এটি করেছেন।”

অন্তর হত্যা মামলা বর্তমানে ফরিদুপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।