বিস্ফোরণ: মসজিদ ‘ওয়াকফ করা জমিতেই’

দশ দিন আগে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় আলোচিত নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার মসজিদটি ওয়াকফ করা জমিতেই গড়ে উঠেছে বলে দাবি করেছে ব্যবস্থাপনা কমিটি।

ওবায়দুর মাসুমও ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2020, 04:35 AM
Updated : 15 Sept 2020, 05:04 AM

তারা বলছেন, একই বংশের চার জনের দান করা পৈত্রিক সম্পত্তিতে বিধি মেনে মসজিদটি গড়ে তোলা হয়েছে। হিন্দু সম্পত্তিতে বা রাস্তা দখল করে মসজিদটি গড়ে উঠেছে বলে যে গুঞ্জন আছে তা ‘সঠিক নয়’ । বরং ওয়াক্‌ফ করা জমি থেকে রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার এখনকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদটি ষাটের দশকে টিনের ঘর ছিল। ১৯৯১ সালের দিকে এখানে প্রথমে একতলা পাকা ভবন তৈরির পর বাড়িয়ে দোতলা করা হয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে এশার নামাজ চলাকালে মসজিদে বিকট শব্দে বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হন। তাদের ৩১ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আরও পাঁচজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

ওই ঘটনার পর থেকে মসজিদটি বৈধ জমিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে তৈরি হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।

মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা বলছেন, ষাটের দশকে স্থানীয় হোসেন সরদার, শামসুদ্দিন সরদার, আফতাব উদ্দিন সরদার ও সিদ্দিক সরদারের স্ত্রী মসজিদের নামে ৮ শতাংশ জমি দান করেন। এর মধ্যে ২ শতাংশ উত্তর পাশের রাস্তার জন্য ছেড়ে দিয়ে টিনের ঘর তৈরি করা হয়। পরে আরও দেড় শতাংশ জমি কিনে ১৯৯১ সালের দিকে মোট সাড়ে ৭ শতাংশ জমিতে পাকা ভবন গড়া হয়।

মসজিদের জমিদাতাদের একজন শামসুদ্দিন সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আমার বাবার সম্পত্তি পেয়েছি, বাবা পেয়েছেন দাদার কাছ থেকে। দাদা পেয়েছেন তার বাবার কাছ থেকে। সিএস, এসএ, আরএস পর্চায় এই জমি আমাদের নামে।

“দাদার বাবা কার কাছ থেকে জমি কিনেছেন সেটা বলতে পারব না। তবে এক সময় মুসলমানদের নামের আগেও ‘শ্রী’ লেখা হতো। এ কারণে অনেকে ধারণা করেন এটা হিন্দু সম্পত্তি, মোটেও তা নয়।”

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে শুক্রবার রাতে এশার নামাজের পর এসি বিস্ফোরিত হয়ে অন্তত ৪০ জন দগ্ধ হয়েছেন।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, মসজিদ ভবন নিয়ম মেনে তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে নিজস্ব সাড়ে সাত শতাংশ জায়গার মধ্যে রয়েছে মসজিদ।

“মসজিদ যে ওয়াকফ করে দিয়েছে তার সমস্ত কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। মসজিদের ড্রইং এখনও কমিটির কাছে আছে।”

মসজিদের রাস্তার কোনো জমি পড়েছে কি না জানতে চাইলে আবদুল গফুর বলেন, “বাইরের কোনো জমি নেই। বরং মসজিদের উত্তর পাশে দুই শতাংশ জমি ছাড়া হইছে রাস্তার জন্য। আর পূর্ব পাশের রাস্তার মধ্যে মসজিদের কোনো অংশ নেই। সেটা রাস্তা মাপলেই বোঝা যাবে। কেউ যদি বলে মসজিদ রাস্তার উপরে বানানো হইছে বা রাস্তা দখল করা হইছে সেইটা ভুল।”

পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদ পড়েছে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায়। ওই এলাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় না পড়লেও ২০১০ সালের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) অধীনে রয়েছে। এখন ড্যাপ এলাকায় কোনো ভবন বানাতে হলে রাজউকের অনুমোদন লাগে। তবে ওই মসজিদ হয়েছে ড্যাপের অনেক আগে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মসজিদ যেহেতু এর আগেই হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে রাজউকের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না তখন। সে সময় কেউ অনুমতি নিত না। রাজউকও অনুমতি দিত না।”

রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ভবন নির্মাণের জন্য কোনো অনুমতি লাগে না বলে তার ধারণা।

তিন দশক আগে পাকা মসজিদ নির্মাণের সময় ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না- তা বলতে পারেননি মসজিদ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সহ-সভাপতি মো. শামসুদ্দিন সরদার।

বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বাইতুস সালাত জামে মসজিদ ঘিরে মানুষের ভিড়; সবাইকে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি যতদূর জানি মসজিদ বানানোর সময় এই রকম অনুমতি লাগত না। তারপরও পারমিশন নিছিল কি না তা ওই সময়ের কমিটির লোকজন বলতে পারবে। আমরা নতুন কমিটিতে আসছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, এখন ইউনিয়নে ভবন নির্মাণের সময় তাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ২৫-৩০ বছর আগে এ ধরনের অনুমতি লাগত কি না, তা তার জানা নেই।