মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন রোববার ঢাকার জজ আদালতে এই অভিযোগপত্র দেন বলে দুদকের আদালত কর্মকর্তা মো. জুলফিকার জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১৪ জনকে এ মামলার সাক্ষী করা হয়েছে।
ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ ‘দেখিলাম’ লিখে স্বাক্ষরের পর অভিযোগপত্র গ্রহণের জন্য ৩১ অগাস্ট দিন ধার্য করেছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পার্থ গোপালের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮০ লাখ টাকার কোনো ‘বৈধ উৎস’ তিনি দেখাতে পারেননি।
“অর্থাৎ তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপার্জন করা ওই ৮০ লাখ টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে নিজের বাসায় লুকিয়ে রেখেছেন মর্মে প্রমাণিত হয়।”
২০১৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে কারা উপ-মহাপরিদর্শক হওয়ার পর পার্থ গোপাল বণিকের বেতন স্কেল হয় ৩১ হাজার ২৫০ টাকা।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, তার বাসায় পাওয়া অর্থ ওই বেতন স্কেলের সঙ্গে ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’। তিনি কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা তোলেননি, কখনও ওই অর্থ আয়কর বিবরণীতেও প্রদর্শন করেননি।
বরখাস্ত হওয়ার আগে পার্থ গোপাল বণিক ছিলেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন্স)। গত বছর ২৯ জুলাই ধানমণ্ডির নর্থ রোডে (ভূতেরগলি) তার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করার পর তাকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরদিন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
‘অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থের অবস্থান গোপন ও পাচারের উদ্দেশ্যে’ বাসায় লুকিয়ে রেখে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও অর্থ পাচার আইনের ৪(২) ধারায় অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়।
দুদকের কর্মকর্তারা সে সময় বলেছিলেন, উদ্ধার হওয়া টাকার মধ্যে পার্থের ফ্ল্যাটের দেয়াল কেবিনেটে গেঞ্জিতে মোড়ানো ছিল ৫০ লাখ টাকা। একটি স্কুল ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় বাকি ৩০ লাখ টাকা।
আটকের সময় পার্থ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, এই ৮০ লাখ টাকা তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা তার শাশুড়ি দিয়েছেন, বাকি ৫০ লাখ টাকা তার সারা জীবনের জমানো টাকা। ফ্ল্যাটের নিচে থাকা তার ব্যবহারের গাড়িটির মালিকও তিনি নন, তার বন্ধুর গাড়ি ব্যবহার করেন। যে ফ্ল্যাটে থাকেন তাও তার শাশুড়ির বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, দুই কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ফেনসিডিলসহ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন থেকে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রামের তখনকার জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। সে সময় তিনি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের ঘুষ বাণিজ্যের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সেখানকার তৎকালীন ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের নাম বলেন।
ওই তথ্যের সূত্র ধরে দুদকের অনুসন্ধানী টিম পার্থ গোপালকে সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে ফ্ল্যাট থেকে ওই সব টাকা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় পার্থ গোপাল বণিককে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।