অবশেষে হল ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর

ডিএনএ পরীক্ষা ও সংরক্ষণের বিষয়টি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার ছয় বছর পর যাত্রা শুরু করল ‘ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2020, 07:10 AM
Updated : 13 August 2020, 07:10 AM

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই অধিদপ্তরের আওতায় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি হবে, যাতে সদস্য হিসাবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। এতদিন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেল গঠন করে সেই কার্যক্রম চালানো হচ্ছিল।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সেল শাখা গত ৯ অগাস্ট এক প্রজ্ঞাপনে নতুন এই অধিদপ্তর গঠনের কথা জানায়।

কর্মকর্তারা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গঠনের ফলে অপরাধী চিহ্নিত করা, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব নিরূপণ কিংবা মৃতদেহ সনাক্ত করার মতো কাজ আরও দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করা সম্ভব হবে।

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিগগিরই পুরোদমে নতুন এ অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হবে। এ দপ্তরের জনবল হবে ৬৪ জন।

বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ ক্যাম্পাসের নিউক্লিয়ার মেডিসিন ভবনের ১১ তলায় ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির কাজ চলছে।

এছাড়া রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রংপুর ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিভাগীয় ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। 

বিভাগীয় ল্যাবরেটরিগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নেওয়া নমুনা সংগ্রহ করে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠায়।

প্রতিটি জীবকোষের নিউক্লিয়াসে থাকে ক্রোমোজোম, যা গঠিত হয় ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড, প্রোটিন ও রাইবোনিউক্লিক এসিড দিয়ে। এর মধ্যে ডিএনএকে বলা হয় বংশগতির বাহক। অর্থাৎ জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে তা এই ডিএনএর জিন বিন্যাসের ওপরই নির্ভর করে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষাগারে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের সময় সাধারণত ১৬টি নির্দেশক (এসটিআর মার্কার) ব্যবহার করা হয়।

একজন ব্যক্তির ডিএনএর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করলে প্রতিটি নির্দেশকের বিপরীতে দুটি করে পৃথক সংখ্যা পাওয়া যায়, যার প্রতিটি ওই ব্যক্তির এক একটি বৈশিষ্টের পরিচয় বহন করে। ১৬টি নির্দেশকের ৩২টি সংখ্যা মিলেই তৈরি হয় ওই ব্যক্তির ডিএনএ রূপরেখা।

প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে এই রূপরেখা হয় আলাদা। ফলে কোনো অপরাধ সংঘটনের স্থানে নমুন হিসাবে পাওয়া রক্ত, ত্বক, দেহের অংশ এমনকি চুল থেকে ডিএনএ পরীক্ষা করেও অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

আবার দুই ব্যক্তির ডিএনএ রূপরেখা, অর্থাৎ একজনের ডিএনএ পরীক্ষায় পাওয়া ৩২টি সংখ্যার সঙ্গে অন্যজনের সংখ্যা মিলিয়ে দেখলেই বাবা-মা বা আত্মীয়তার সম্পর্ক বলে দিতে পারেন বিজ্ঞানীরা। 

ধর্ষণের অভিযোগ বা পিতৃত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশে আগে থেকেই পরিচিত। সম্প্রতি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার সাহায্য নিয়েছে র্যাব, যদিও কোনো ইতিবাচক ফল তারা এখনো দেখাতে পারেনি।

এছাড়া তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরের জন্যও ডিএনএ পরীক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষাগারে।

এ বিষয়গুলো আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ‘ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) বিল-২০১৪’ পাস হয়। সেই আইনের আওতায় ছয় বছর পর ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গঠন করা হল।