এক বছর আগে স্বর্ণালংকার লুটে নেওয়া গৃহকর্মী ধরা

পরিচয় নিশ্চিত না হয়েই নতুন এক গৃহপরিচারিকার কাছে দুই শিশু সন্তানকে রেখে কর্মস্থল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন ডা. বিচিত্রা রানী দে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2020, 08:23 PM
Updated : 13 July 2020, 08:23 PM

দুপুরে রাজধানীর বংশালের নাজিরাবাজারের বাসায় ফিরে এসে দেখেন তার দুগ্ধপোষ্য এক শিশু সন্তানসহ দুই সন্তান ঘরের ভেতরে তালাবদ্ধ। বিকল্প চাবি দিয়ে তালা খুলে দেখেন দুই সন্তান সুস্থ থাকলেও সব এলোমেলো, স্বর্ণালংকার কিছুই নেই।

প্রায় এক বছর আগের এই ঘটনায় মামলা করেন বিচিত্রা রানী। বংশাল থানায় মামলা করার পর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নেমে শনিবার সেই গৃহপরিচারিকাকে গ্রেপ্তার এবং তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার কেনার অভিযোগে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০১৯ সালের ২৯ অগাস্ট করা মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব নেওয়র পর কোন কূলকিনারা পাওয়া যাচ্ছিল না।

তারা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই চাকরীজীবী। বিচিত্রা রানী ডাক্তার, আর তার স্বামী একজন প্রকৌশলী। সকালে দুইজনই বের হয়ে যান। কিন্তু সন্তানের কারণে তাদের চাকরিতে কিছু সমস্যা হচ্ছিল। এজন্য তারা একজন গৃহপরিচারিকা খুঁজছিলেন। এরই মধ্যে কোহিনুর নামে একজন ‘দালালের’ সন্ধান পান।

এই দালালই এক নারীকে ডা. বিচিত্রার কাছে দিয়ে যান জানিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা আজাদ বলেন, সেই নারীর পুরো নাম, ঠিকানা বা ছবি না নিয়েই বাসার গৃহপরিচারিকার কাজে নেওয়া হয়েছিল।

গত বছর ২৯ অগাস্টের ঘটনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রথম দিনই দুই বাচ্চাসহ বাসার প্রয়োজনীয় কাজ বুঝিয়ে দিয়ে ডা. বিচিত্রা এবং তার স্বামী কর্মস্থলে চলে যান।

ওই সব স্বর্ণালংকার গলিয়ে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আবুল হাসেম

“দুপুরে ডা. বিচিত্রা বাসায় ফিরে দেখেন বাইরে থেকে তালা লাগানো। বিকল্প চাবি দিয়ে খুলে দেখেন গৃহপরিচারিকা নেই, আলমারির লকার ভাঙ্গা। তবে দুই সন্তান সুস্থ আছেন।”

থানায় দায়ের করা মামলায় বিচিত্রা বলেছেন, লকারে তার ২০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিল, যার সবটাই নতুন গৃহপরিচারিকা নিয়ে গেছেন। ওই গৃহপরিচারিকার নাম আমেনা এটুকুই শুধু জেনেছেন।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আজাদ জানান, গোয়েন্দা পুলিশ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর কোহিনুরের সন্ধানে নামে। দীর্ঘদিন খুঁজে তাকে আটকের পর জানা যায়, ওই বাসায় আমেনা নামের একজনকে তিনি দিয়েছিলেন, সেই আমেনাকে আবার আরেকজন তাকে দিয়েছিলেন।

আমেনার বিষয়ে কোহিনুরের কাছে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি জানিয়ে সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, “আবারও আমরা অন্ধকারে পড়লাম।”

দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১০ মাস তদন্ত করে জানা যায়, আমেনা নামের এক নারীকে অনেক দিন ধরে এই এলাকায় কেউ দেখছে না। তার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে।

“এরপরেই আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পেয়ে কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে শনিবার আমেনাকে গ্রেপ্তার করি। সে দোষ স্বীকার করে জানায়, তাঁতীবাজারের ‘ফোর স্টার জুয়েলার্স’এর মালিক মো. আবুল হাসেমের কাছে সে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার এক লাখ ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে।”

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আবুল হাসেমকে শনিবারই গ্রেপ্তার করা হলে তিনি ওই সব স্বর্ণালংকার কেনার কথা স্বীকার করেন বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা আজাদ।

“আবুল হাসেম বলেছে, প্রথমে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পর দিন এসে আরও তিন হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা। এসব স্বর্ণালংকার গলিয়ে বিক্রি করা হয়েছে।”

রোববার দুইজনকেই আদালতে পাঠালে তারা ‘দোষ স্বীকার’ করে জবানবন্দি দেন বলে  জানান আজাদ।

পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কাউকে এ ধরনের গৃহপরিচারিকার কাজে না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।