জাতির জন্য ‘মায়ের ভূমিকা রেখেছে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মা যেমন আদর-স্নেহ দিয়ে সন্তানকে পূর্ণ ও পরিণত করে তোলেন, আত্মপ্রত্যয়ী ও মর্যাদাবোধে উদীপ্ত করেন তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালির জাতীয় জীবনের বিকাশে একই ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2020, 04:18 PM
Updated : 1 July 2020, 05:23 PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে তিনি একথা বলেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ (ফাইল ছবি )

পরে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে ওই ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “এবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এমন এক সময় উদযাপিত হচ্ছে যখন মুজিববর্ষ চলমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উৎসব এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদযাপনের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। কিন্তু কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই মাহেন্দ্রক্ষণকে আমরা জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করতে পারছি না। এই দুঃসহ অবস্থা কেটে যাবে এবং অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা আনন্দঘন ও বর্ণাঢ্যভাবে সকল উৎসব উদযাপন করব।”

সভায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে যুক্ত হয়ে ‘শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রসঙ্গ: আন্দোলন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এদেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এসব আন্দোলনে বিভিন্ন সময় অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হন এবং আত্মত্যাগ করেন।”

দেশ ও জাতির প্রত্যাশা পূরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অনন্য অবদান’ তুলে ধরে তিনি বলেন, “শুধু জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় নয়, বরং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যদের মধ্য থেকে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার মাতৃসম প্রতিষ্ঠান। মা যেমন সন্তানকে আদর স্নেহের পরশমনিতে পূর্ণ ও পরিণত করে তোলে, আত্মপ্রত্যয়ে সুদৃঢ় করে, মর্যাদাবোধে সিক্ত করে তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জাতির জন্য সেই ভূমিকা পালন করেছে।”

এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ধরে রাখতে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, “বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জাতির জন্য যে ভূমিকা রেখেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার চেয়ে বেশি করেছে। একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।”

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি মৌলিক সমস্যা তুলে ধরে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন তিনটি সমস্যা প্রকট। গবেষণা ও প্রকাশনার অভাবে র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। যেখানে পূর্বে একশ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় থাকত, এখন হাজারেও জায়গা হচ্ছে না। আমাদের ওই ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে এই জায়গায় গুরুত্ব দিতে হবে।

“আরেকটি হলো লাইব্রেরি, যেখানে শিক্ষার্থী সংকুলান হচ্ছে না। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে অত্যাধুনিক করা প্রয়োজন।”

মেডিকেল সেন্টারকে ‘অত্যাধুনিক’ করতে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার ঘোষণা দেন তিনি।

এ সময় বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তিকে সামনে রেখে শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “গবেষণার সম্প্রসারণ ও শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করাই হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের অঙ্গীকার। আমাদের গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এবং এর উত্তরোত্তর গুণগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।”

সভায় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূইয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যুক্ত হন।