দেশে কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে ১২৭১ জনের মৃত্যু: বিপিও

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (বিপিও) জানিয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2020, 07:09 PM
Updated : 25 June 2020, 07:09 PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) গবেষণা প্রকল্প বিপিও করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে প্রতি সপ্তাহে হালনাগাদ তথ্য ‘কোভিড-১৯ গ্রাফিক্স’ শীর্ষক লেখচিত্র আকারে প্রকাশ করছে। গত ৮ মার্চ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর ওই পরিসংখ্যান দিয়েছে তারা।

জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপির আর্থিক সহায়তায় দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র, অনলাইন সংবাদমাধ্যম, টেলিভিশনসহ ২৪টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বিপিও তাদের ১১তম ‘কোভিড-১৯ গ্রাফিক্স’ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে দেশে ১৭৪ জন করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরে পড়ে। শুরুতে প্রথম দুই সপ্তাহে কেউ উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার সংবাদ না এলেও পরে গত ২২ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত তিনজন কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে মারা যান বলে লেখচিত্রে দেখা যায়।

তবে ২৯ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৩ জন কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে মারা যান। পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে পর্যায়ক্রমে ১০৬, ১২০, ১১৪, ৯৩, ৫০, ৬৭, ৪৮, ৬৩, ১৫৪, ২০৬ এবং সর্বশেষ সপ্তাহে ১৭৪ জন মিলে মোট ১২৭১ জনের মৃত্যুর তথ্য উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

বিপিও বলছে, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৮৬ জন। এরপর ঢাকায় ৩০৩, খুলনায় ১৩২, রাজশাহীতে ১২৩, বরিশালে ১৩৩, সিলেটে ৭৮, রংপুরে ৬৮ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৮ জন মারা গেছেন করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে।

এছাড়া বিপিও তাদের গবেষণায় করোনাভাইরাস মহামারী ঘিরে সংঘটিত দেশের বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরেছে ।

তাদের প্রতিবেদন বলছে, করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে গত ২০ জুন পর্যন্ত ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। এছাড়া ত্রাণ আত্মসাৎ, খাদ্যে ভেজাল ও করোনাভাইরাস বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘনের মতো অনিয়ম ও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১০ হাজার ৬০৩ জনকে।

বিপিও বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে ২১০টি নির্যাতন ও সামাজিক কলঙ্ক দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৫৬টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ ত্রাণসামগ্রী ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহায়তার দাবিতে, বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবিতে ৪৪ শতাংশ এবং ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিরুদ্ধে ৬ শতাংশ।

এছাড়া করোনাভাইরাস নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে ১৩১টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সারা দেশে। এতে ১৮ জন মারা গেছেন এবং ৫৫০ জন আহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার নিয়মিত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের তথ্য দিচ্ছেন। কিন্তু সেখানে কোভিডের লক্ষণ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। মানুষ মনে করছে, কোভিডের উপসর্গ নিয়ে বহু সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণের শুরুতে এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও, মাঝে অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এখন আবার কমছে। কারণ পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে।”

গবেষণার পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সেকেন্ডারি ডেটা অ্যানালাইসিস করে গবেষণা করছি। জাতীয়, আঞ্চলিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, টেলিভিশনসহ সব সংবাদমাধ্যম থেকে তথ্য নিচ্ছি। তথ্যের ক্রস চেক করার জন্য বেশি গণমাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে মাঠপর্যায় থেকে এসব তথ্য যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না।”

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, “করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও তাদের অনেকেই পজিটিভ নাও হতে পারেন। একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে আমরা পেয়েছি, কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও এদের ৮৫ শতাংশেরই মৃত্যুর পর করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। তবে আমাদের গবেষণায় নেগেটিভ আসার তথ্যটি তুলে আনা সম্ভব হয়নি।”