আওয়ামী লীগ সরকার তার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে বলে স্মরণ করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে একথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার পক্ষে অনুদান গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।
এদিন বিকাশের ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৫০টি ভেন্টিলেটর এবং প্রায় সাড়ে ছয় লাখ চিকিৎসা সরঞ্জাম ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দিয়েছে চীনের আলিবাবা ফাউন্ডেশন ও জ্যাক মা ফাউন্ডেশন।
বিকাশের মতো অন্যান্য মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যেই ৫০ লাখ মানুষকে ঈদ উপলক্ষে নগদ অর্থ সহায়তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে যখন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা কর্মস্থল থেকে নিজ নিজ গ্রামে চলে গিয়েছেন, সেই সময়ে তাদের বেতনের টাকা গেছে মোবাইলে। এ ধরনের আরও অনেক সেবার পাশাপাশি এখন করোনাভাইরাস আক্রান্তদের অনেকেই ঘরে বসেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারছেন মোবাইলসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই প্রসঙ্গ টানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
“যেমন মানুষকে সহযোগিতা দেওয়া, তাদের কাছে নগদ টাকা পৌঁছানো, তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া বা ঘরে বসে চিকিৎসা পরামর্শ যাতে পেতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা, ব্যবসা বাণিজ্য চালানো, ক্রয়-বিক্রয়, আত্মীয় স্বজন বা আপনজনের সঙ্গে কথা বলা, দেখা সাক্ষাৎ, চিকিৎসা সেবা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে আমরা করে যাচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কাজেই ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারণেই কিন্তু এটা সম্ভব হচ্ছে। আমরা যদি এই ডিজিটাল বাংলাদেশ না করতাম, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যদি উৎক্ষেপণ না করতাম এবং বাংলাদেশটা যদি একটা নেটওয়ার্কের মধ্যে না আসত তাহলে হয়ত এটা সম্ভব হত না। কাজেই ডিজিটাল করেছি বলে এটা সম্ভব হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান দিতে আসা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা এই যে আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন, সহানুভূতি দেখাচ্ছেন সেজন্য আপনাদেরকে আমি জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
সবার কাছে সহযোগিতা পৌঁছে দিতে সরকারের প্রচেষ্টা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রত্যেকটা শ্রেণি-পেশার মানুষ সকলের কাছে যেন কিছু না কিছু আমরা সহযোগিতা পৌঁছাতে পারি যেন তারা কষ্ট না পায়- সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আমরা কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল যে, বাংলাদেশটাকে আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ব। ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী, ২০২১ সাল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি। এই মুজিববর্ষ আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম।
“এই মুজিববর্ষ লক্ষ্য রেখেই আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিলাম যেন অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ দাঁড়াতে পারে। একটা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যেন মানুষের জীবনমান উন্নত করতে পারে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এটা অনেকটা স্থবির হয়ে গেছে, এটা সত্য।”
তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণসহ যে কোনো সংকট মোকাবেলার আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, যে কোনো বিপদ আসুক আর যে কোনো সমস্যা আসুক সেটা নিশ্চয়ই আমরা মোকাবেলা করতে পারব।”
“আমাদের বাংলাদেশে ছয়টা মৌসুমে আসে। কাজেই আমাদের এই সমস্যাটা তো আছেই। সামনে আবার বর্ষাকাল আসবে। সেখানে নদীভাঙনে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি। ঘর-বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি এবং বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।”
করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় ‘আন্তরিকতার সঙ্গে’ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।
“কাজেই আমরা তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত করতে। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করা, তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করা, তাদের সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া সব দিক থেকেই যেন আমরা কাজ করতে পারি। সেজন্য সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই যে আপনারা এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, তা সাধারণ মানুষের কাজে লাগবে।”