লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার বিচার দাবি

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2020, 06:17 PM
Updated : 29 May 2020, 06:17 PM

শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে এসব সংস্থার জোট সিভিল সোসাইটি ফর গ্লোবাল কমিটমেন্টস অন মাইগ্রেশন (সিজিসিএম) এ দাবি জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “৩৭ জন বাংলাদেশিসহ ৪০-৪২ জন মানুষকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জড়ো করেছিল মানবপাচারকারী চক্র। এই চক্রকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে খুঁজে বের করতে বিভিন্ন দেশকে প্রয়োজনে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

লিবিয়া থেকে বিভিন্ন সময় ফিরে আসা বাংলাদেশিরা জিম্মি ও মুক্তিপণ আদায়সহ নিপীড়নের নানা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমেও এসব কথা উঠে এসেছে।

শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদাহতে এক ঘটনায় মানব পাচারকারী ও তাদের স্বজনদের গুলিতে প্রাণ হরান ২৬ বাংলাদেশি। সেখানে বাংলাদেশিদের সঙ্গে প্রাণ গেছে চার আফ্রিকান অভিবাসীর।

ওই ঘটনায় আহত ১১ জন সে দেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আর প্রাণে বেঁচে যাওয়া একজন আছেন আত্মগোপনে। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস আত্মগোপনে থাকার ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে।

আহতদের সঙ্গে কথা বলে নিহতদের মধ্যে ২৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তাদের ১১ জনই মাদারীপুরের।

সিজিসিএমের বিবৃতিতে বলা হয়, “এভাবে যেন আর কোনো অভিবাসী সেখানে প্রাণ না হারায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জোর ভূমিকা পালন করতে হবে।”

ইউএনএইচসিআরের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে বিশ লাখ মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন। এভাবে সাগরপথ পাড়ি দিতে গিয়ে ১৯ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলেই শুধু ৬৯৩ জন বাংলাদেশি এভাবে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে আটক হয়েছেন।

গত পাঁচ ধরে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধ থাকলেও কীভাবে এতো লোক সেখানে যাচ্ছে সে প্রশ্ন তুলেছে সিজিসিএম।

এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে জোটটি বলছে, মূলত বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকার লোকজন এভাবে ইউরোপে যায়। কাজেই এই এলাকার স্থানীয় দালাল ও মানবপাচার চক্রকে চিহ্নিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশকেই।

একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী যে চক্রগুলো রয়েছে লিবিয়া বা অন্য দেশে, তাদের বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিকভাবে সোচ্চার হওয়ার দাবি জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

যৌথ বিবৃতি দেওয়া সিজিসিএম জোটের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক, বিএনএসকে, আইআইডি, ওকুপ, ওয়ারবী, বিএনপিএস, আসক, বিলস, বিএনডব্লিউএলএ, বোমসা, এসিডি, আওয়াজ, ফিল্মফরপিস, কর্মজীবি নারী, ডেভকম, ইমা, মাইগ্রেশন নিউজ এবং এসএনএ।

পৃথক বিবৃতিতে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, গত কয়েকবছরে আইওএম ও ব্র্যাকের ‘প্রত্যাশা’ প্রকল্প থেকে সাড়ে ৩০০ জন লিবিয়া ফেরত বাংলাদশিকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

অভিবাসীদের জিম্মি করা বন্ধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে জোর ভূমিকা পালন করতে হবে।

আলাদা এক বিবৃতিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক অভিযোগ করেন, লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেও বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহ ও মন্ত্রণালয় চরম দায়িত্বহীন ভূমিকা পালন করছে।

তিনি বলেছেন, “শ্রমিকরা হাজার হাজার অভিযোগ করার পরও দূতাবাসের কোনো ভূমিকা দেখা যায় না।”