দমবন্ধ দিনে ‘সুখবর’ দিল লাভবার্ড

অস্থির সময়, দমবন্ধ পরিবেশ; নিজে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে অভূতপূর্ব এক লড়াইয়ে মানুষ। যে সময়ে চোখে না দেখা এক ভাইরাসের কাছে অসহায় লক্ষ প্রাণ, সে সময় প্রকৃতিতেই আবার নতুন প্রাণের জেগে ওঠার বার্তা।

সুমন মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2020, 01:49 PM
Updated : 21 April 2020, 01:49 PM

মানুষ নয়, তারা তো ব্যস্ত লড়াইয়ে। মিষ্টি সুরে নতুন প্রাণের সুসংবাদ আসলে একজোড়া ‘লাভবার্ডের’; এই ঢাকাতেই তাদের বাস। 

লাভবার্ড যুগলের ঘরে নতুন অতিথি আসার সম্ভাবনার খবরটি জানালেন ফকিরেরপুলের টয়েনবি সার্কুলার রোডের পাখি ব্যবসায়ী আমিরুজ্জমান।

অবরুদ্ধ দশায় বেচাকেনা নেই, তারপরও প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য দোকানের ঝাঁপ খোলেন তিনি, পাখিগুলোর যত্নআত্তি করেন, খাবার-পানি দেন। মঙ্গলবার সকালেও দোকান খুলেই তার প্রিয় পাখির এই কণ্ঠ শুনে আনন্দে আত্মহারা হন আমিরুজ্জামান।

“হ্যাপি ডে ফর মি। অনেক কষ্টের মধ্যে আছি, বিক্রি নাই, আয় নাই। এক বদ্ধ পরিবেশ-পরিস্থিতি। এরই মধ্যে সকালে দোকান খুলে দেখি আমার প্রিয় লাভবার্ড জোড়া মিষ্টি কণ্ঠে আনন্দ সংবাদ জানাচ্ছে।”

পাখিদের সাথে থাকতে থাকতে আমিরুজ্জমানও যেন তাদের ভাষা বোঝেন। আর ‘রাজা’-‘রানি’ (লাভবার্ড যুগল) তো তার নিজের পোষা, তাদেরটা আরও ভালো বুঝতে পারেন।

ওদের এ আনন্দের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রানি ডিম পেড়েছে। মিষ্টি গলায় যে ডাক শুনছেন সেটা নতুন অতিথি আসার ডাক। লাভবার্ড যখন ডিম পাড়ে তখন এ রকম করে ডাকে।”

আমিরুজ্জামানের দোকানে এই এক জোড়া লাভবার্ডই শুধু ‘নট ফর সেল’- অর্থাৎ তার নিজের শখের।

দোকানে দেখা গেল ‘রানি’ মাটির ছোট হাঁড়ির বাসায় বসে আছে। মাঝে-মধ্যে ‘রাজা’র সাথে মুখ বের করে মিষ্টি কিচিরমিচির সুরে চলছে ভাব বিনিময়।

আমিরুজ্জামান বলেন, “লাভবার্ড স্বভাবজাতভাবে লাজুক প্রকৃতির পাখি আবার রোমান্টিকও। মানুষজন কাছে দেখলে কিছুটা ভয়-অস্বস্তি কাজ করে ওদের। তবে এই পাখির রূপের বাহার যেমন মানুষকে আকর্ষণ করে, তেমনি ভালাবাসার জন্য তাদের অন্তরের বন্ধনও দেখার মত।

“সেজন্য দেখবেন যদি পেয়ারের (জোড়া) একটি মারা যায় বা আলাদা হয়ে যায়, তবে অন্যটি এমন খেয়ালি আচরণ করে, যেন হতাশায় ভুগছে। এরা একাকীত্ব একদম পছন্দ করে না। তখন বন্দি মানুষের মত অসহায় আচরণ করে।” 

কথার ফাঁকেই আমিরুজ্জামান তার প্রিয় পাখি দুটিকে খাবার দিলেন- কাউন, তিসি, সূরযমুখীর বীজ আর সরিষার দানা। রাজা খাবার খেলেও রানি ‘মাটির ঘর’ থেকে বেরোয়নি। এর কারণও জানালেন আমিরুজ্জামান।

“ডিম পেড়েছে তো, এখন রানি খাবে না। রাজার খাওয়ার পর ঘর থেকে বেরোবে রানি।”

এই পাখি ব্যবসায়ী জানালেন, ছোট খাঁচায় একজোড়া বাজরিগারও ডিম পেড়েছে। তার দোকানে ফিঞ্চ আর টিয়া পাখিও আছে।

দোকান খোলার পর নয়া পল্টন থেকে ‘বাজরিগার’ পাখির জন্য খাবার কিনতে আসেন রফিকুর রহমান। অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দায় পাখি পোষেন তিনি।

রফিক বলেন, প্রথম দিকে দোকানপাট বন্ধের কড়াকড়িতে বাসার পোষা পাখিগুলো ভীষণ খাবারের কষ্টে ছিল। এখন আমিরুজ্জামানের দোকান খোলা থাকায় সেই সমস্যা দূর হয়েছে।

মানুষের অবরুদ্ধ দশার একটি প্রভাব পোষা প্রাণীদের ওপরও পড়ছে বলে মনে করেন রফিক।

“এরকম পরিবেশে পোষা পাখিদের মন ভালো থাকে না। কারণ সারাক্ষণই তাদের চারপাশে মানুষজন থাকে। বাসায় তো আমরা বন্দি, স্পেসও কম। বারান্দা যেতেই হয়, তখন পাখিরাও ডিসটার্বড হয়। কিন্তু কিছু করার তো নেই,” বলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই চাকুরে।