নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তারের গতি কমিয়ে আনার মরিয়া চেষ্টায় সারা দেশে ছুটি ঘোষণার পর সড়ক, নৌ ও আকাশপথে সব ধরনের যোগাযোগও বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
Published : 24 Mar 2020, 08:38 PM
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মত ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশও কার্যত অবরুদ্ধ দশার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের হিসাবে বিশ্বের ১৬৯ দেশে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে; আক্রান্ত হয়েছে প্রায় চার লাখ মানুষ।
আর বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ৩৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাদের চারজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে অতি সংক্রামক এই ব্যাধি বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়লে কী পরিণতি ঘটবে- তা নিয়ে সবার মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ-আতঙ্ক।
জনসমাগমে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ে বলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা এসেছিল আগেই।
আক্রান্তের সংখ্যা ত্রিশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সোমবার সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব অফিস-আদালতে ছুটি ঘোষণা করে।
সকালে যারা কমলাপুর স্টেশনে গিয়েছিলেন, তারা জানতে পারেন, লোকাল ও মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর একের পর এক সব পথে যোগাযোগ বন্ধের ঘোষণা আসতে থাকে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল সারাদেশে সব গণপরিবহন ‘লকডাউন করার’ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি জানান, ট্রাক, কভার্ডভ্যান, ঔষধ, জরুরি সেবা, জ্বালানি, পচনশীল পণ্য পরিবহণ- এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। তবে পণ্যবাহী যানবাহনে কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
বিআইডব্লিউটিএ সারা দেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল মঙ্গলবার থেকেই বন্ধ ঘোষণা করে।
এ সংস্থার পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পন্টুনে আজ যতগুলি লঞ্চ ভিড়ে রয়েছে, সেগুলো ছাড়ার পরে এ আদেশ কার্যকর হবে।”
দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে; তবে পণ্যবাহী ট্রেন চলবে।
“কিছু ট্রেন এখনও পথে রয়েছে। সেগুলো ঢাকাসহ গন্তব্যে এসে আবার ছাড়ার নির্ধারিত প্রান্তে চলে যাবে। সন্ধ্যার পর শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলবে না।”
বগুড়ার আদমদীঘি যাওয়ার জন্য সকালে মহাখালী টার্মনালে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন বাড্ডার একটি পোশাক কারখানার কর্মী সুমন।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কারণে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিক। তাই এখন বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
“মালিক বলেছে কারখানা খুললে আবার ফোন দেবে। তখন আবার আসব।”
মঙ্গলবার দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখন ঢাকায় থাকার মত না।
“গত কয়েকদিন ধরে কাজের বুয়াও আসছে না। খাবার পাওয়াও কঠিন হবে। এই বিপদের দিনে পরিবারের কাছে থাকাই ভাল, তাই চলে যাচ্ছি।”
একতা পরিবহনের এজিএম নাসির উদ্দিন বলেন, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর টার্মিনালে যাত্রী কমে গিয়েছিল। তবে সোমবার ছুটি ঘোষণার পর যাত্রী আবার বাড়তে শুরু করে।
“আজ সকাল থেকেই লোক বেশি আসছে লকডাউনের খবর শুনে। বিকাল পর্যন্ত আমাদের গাড়ির সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।”
গাবতলী বাস টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে দেখা গেল, বাসের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কাউন্টারে বলা হচ্ছে বাস নাই, কোথাও টিকেট শেষ, কেউ আবার বলছে ফেরি চলাচল বন্ধ বলে বাস চলবে না।
হানিফ পরিবহনের দক্ষিণবঙ্গের কাউন্টারের কর্মী সাজ্জাদ বলেন, তাদের সব বাস আগের সময়সূচি অনুযায়ী ছেড়ে যাচ্ছে।
মাগুরা যাওয়ার জন্য সকাল থেকে গাবতলী টার্মিনালে অপেক্ষায় ছিলেন মোহাম্মদ ইমরান খান। তবে সরাসরি কোনো বাসের টিকেট তিনি পাননি।
“কাউন্টার থেকে বলছে ফেরি চলাচল বন্ধ। অনেক কষ্টের লঞ্চ পারাপারের একটি টিকেট পাইছি।”
মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত তারা জেনেছেন। নতুন কোনো ঘোষণা না এলে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস চলাচল করবে।
ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও কমলাপুর স্টেশনে ভিড় করে ছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। তাদের অনেকে দাঁড়িয়েছিলেন টিকেট ফেরত দেওয়ার দীর্ঘ লাইনে।
প্রথমে নির্দেশনা ছিল টিকেট ফেরত নেওয়া হবে না। এ কারণে বেলা ৩টার দিকে অনেকে হট্টগোল শুরু করেন। পরে টিকেট ফেরত নেওয়ার ঘোষণা এলে লোকজন শান্ত হয়।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্ধের ঘোষণা পেয়ে হাজার হাজার মানুষ এসেছে। বিভিন্ন গন্তব্য থেকে যেসব ট্রেন ছেড়ে এসেছে, সেগুলোর সব ফেরত যাবে না। যেসব ট্রেনের বেইজ স্টেশন ঢাকায়, সেগুলো ঢাকায় থাকবে। এসব ট্রেনের টিকেট ফেরত দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব ট্রেনের বেইজ স্টেশন ঢাকার বাইরে, সেগুলো তাদের স্টেশনে ফিরে যাবে।”