মরতে বসা নদীতে প্রাণ ফেরাতে উদ্যোগের প্রত্যাশা

দখল-দূষণে গতি হারিয়ে মরতে বসা নদীগুলোতে প্রাণ ফেরাতে সরকার ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগের প্রত্যাশা করছেন নাগরিক সাংবাদিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2020, 05:58 PM
Updated : 13 March 2020, 07:32 PM

শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ফেইসবুক লাইভে এই প্রত্যাশার কথা জানান নাগরিক সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন শুভ ও রবিউন নাহার তমা।

ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের পাশাপাশি নদী রক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদন লেখেন তারা।

ব্লগের সঞ্চালক আইরিন সুলতানার পরিচালনায় ‘নগর ও নাগরিকের নদী’ শীর্ষক এই আলোচনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে নদ-নদী হারিয়ে যাওয়ার চিত্র, কর্তৃপক্ষের ‘অবহেলা’ এবং সাধারণ মানুষের ‘দায়িত্বহীনতার’ বিষয়গুলো উঠে আসে।

নিজের গবেষণার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শাহাবুদ্দিন শুভ বলেন, “সিলেট বিভাগে কয়টি নদী রয়েছে সরকারের দপ্তরগুলোতে তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। নদী রক্ষা কমিশন এবং জেলা তথ্য বাতায়নের তথ্যের মধ্যেই রয়েছে বড় ধরনের গড়মিল। মৌলভীবাজারে নদীর সংখ্যা কোথাও লেখা রয়েছে ৯টি, আবার কোথাও রয়েছে ৫ থেকে ৬টি।

“এই পরিস্থিতিতে শিশুরা কী শিখবে? ভুলগুলো শোধরানো উচিত, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা ভুল না শেখাই। হিসাবের এই ৯-৬ নদী রক্ষায় সরকারি সংস্থাগুলোর উদাসীনতার প্রমাণ বহন করে।” 

নাগরিক সাংবাদিক রবিউন নাহার তমা বলেন, “গত বর্ষার আগে তুরাগ নদীর তীর উদ্ধারে সরকার একটি অভিযান চালিয়েছিল। ওই অভিযানের পর গত বর্ষায় তুরাগ নদী ঘুরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি লক্ষ করেছিলাম। তবে সম্প্রতি তুরাগের কাউন্দিয়া নামের একটি স্থানে গিয়ে দেখলাম মন খারাপ করার মতো ঘটনা।

“দখল-দূষণে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকাই কষ্টকর। স্কুলপড়ুয়া ছোট ছোট শিশুরা নাক চেপে ধরে সেখানে নদী পারাপার হয়। এই নদীর দূষিত পানি যেসব চাষাবাদের কাজে ব্যবহার করা সেসব শস্য কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত সেটাও চিন্তার বিষয়।”

দূষণের দায় কার- এ প্রশ্নের উত্তরে শুভ বলেন, “দায় সবার। তবে সবার আগে এক্ষেত্রে সরকারের নামটি আসে। কারণ নদী রক্ষার মূল দায়িত্বটি সরকারের। সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা জেনে বুঝে নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষিত করছেন তারাও দায় এড়াতে পারেন না।

“অনেক সময় দেখা যায়, নদী দখলকারীদের মধ্যে সংসদ সদস্যদের নাম চলে আাসে। নির্বাচনের আগে তাদেরকে একটি অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করতে হবে যেখানে লেখা থাকবে, বিজয়ী হলে আমাকে দিয়ে নদী দখলের কাজটি হবে না।”

 

দখল ঠেকাতে নদী রক্ষা কমিশন ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মাঝে মধ্যে কিছু দখলমুক্ত করার কাজে গেলেও দূষণ ঠেকানোর কাজে কমিশনের ভূমিকা খুবই নগণ্য।”

যত্রতত্র প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার ও বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে নদীর প্রবাহ নষ্ট হওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।

শুভ বলেন, “নদীর তলদেশে প্লাস্টিক ও পলিথিন জমা হওয়ার ফলে প্রবাহ নষ্ট হয়ে চর পড়ে যাচ্ছে। জনগণের মধ্যে পলিথিন ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। সরকারও সুলভ মূল্যে পলিথিনের বিকল্প বাজারে ছাড়তে পারেনি। ফলে প্লাষ্টিক-পলিথিনের ঝুঁকি থেকে নদী মোটেও নিরাপত্তা পায়নি।”

নাগরিক সাংবাদিক তমা বলেন, প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার রোধ করার ক্ষেত্রে জনসচেতনতার পাশাপাশি আইনের শাস্তিমূলক প্রয়োগ করে দেখাতে হবে। পলিথিন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সমাজের কথা চিন্তা করে এই ব্যবসা থেকে সরে আসা উচিত।

“নদীর কূলে শিল্প কারখানা স্থাপন নিঃসন্দেহে উন্নয়নের অংশ। আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শিল্প কারখানাগুলোতে দূষণের বিষয়ে শতভাগ সতর্ক থাকতে হবে।”

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নদী সুরক্ষার বিষয়ে প্রতি মাসে একটি সচেতনতামূলক আয়োজন করার কথা হাই কোর্টের এক আদেশে বলা হলেও কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার বাস্তবায়ন দেখেননি বলে অভিযোগ করেন শুভ।