কবিতা গল্প উপন্যাসের বাইরেও নজর পাঠকের

সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে গল্প, কবিতা ও উপন্যাসের কদর সবচেয়ে বেশি হলেও বইমেলায় আসা অনেক তরুণ পাঠকই এগুলোর বাইরে ইতিহাস, বিজ্ঞান, গবেষণা, ভ্রমণ, অনুবাদ ও সমসাময়িক বিষয়ের বই খুঁজছেন বলে একাধিক প্রকাশক জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2020, 03:20 PM
Updated : 8 Feb 2020, 03:24 PM

শনিবার মেলায় আসা বেশ কয়েকজন পাঠকের সঙ্গে আলাপচারিতায়ও সাহিত্যের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ের বইয়ের প্রতি তাদের আগ্রহের কথা জানা যায়।

গ্রন্থমেলার সপ্তম দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী লুৎফুন্নাহার ফোরকান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইতিহাসের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রথম পছন্দ ইতিহাসের বই। গত শতকের রাজনীতি, সমকালীন রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে বইগুলো আমি খুঁজছি।”

বাড্ডা থেকে আসা শাহেদ এরশাদ বলেন, “আমার নিজের কাজের জন্য গবেষণাধর্মী বইগুলো বেশি পড়তে হয়। ইতিহাস, ঐতিহ্যবিষয়ক যে বইগুলো কিনব, সেগুলোতে আমার প্রয়োজনীয় তথ্য পাই কি না তা দেখব।”

আরেক তরুণ পাঠক শেহনাজ শিউলি বলেন, “আমি উপন্যাসের পাশাপাশি অনুবাদেরও ভীষণ ভক্ত। আমি বইমেলায় এসে তাই অনুবাদের বই খুঁজছি।”

পরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেডের (বিপিএল) স্টলে এসে স্যার জেমস জর্জ ফ্রেজারের ‘গোল্ডেন বাউ’-এর অনুবাদ গ্রন্থটি কিনে নেন।

কুমকুম হাসান খুঁজছিলেন প্রবন্ধ সমগ্র। তিনি বাংলা একাডেমির স্টল থেকে সত্যেন সেন রচনাসমগ্রের কয়েকটি খণ্ড কিনেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন নিয়েও প্রবন্ধের বই কিনবেন বলে জানালেন।

ম্যাগনাস ওপাস প্রকাশনীর স্টল ব্যবস্থাপক মুকুল আক্তার বলেন, “পাঠক শুধু কবিতা, উপন্যাসে আটকে থাকছে না। কখনও সায়েন্স ফিকশন, কখনও আবার কবিতার বই ভালো বিক্রি হচ্ছে।”

পার্ল পাবলিকেশন্সের স্টল ব্যবস্থাপক হুমায়ূন কবীর বলেন, “সায়েন্স ফিকশন, অ্যাডভেঞ্চার আর ভ্রমণের বই এসেছে এবার। সেদিকে পাঠকের নজর বেশি। এছাড়া কথাসাহিত্যিকদের রচনা সমগ্র, অনুবাদের বইয়ের দিকেও পাঠকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বেশ কয়েকটি আত্মজীবনী এসেছে আমাদের প্রকাশনী থেকে। পাঠক সেদিকেও নজর রাখছে।”

বাতিঘরের স্টল ব্যবস্থাপক তারেক আবদুর রব বলেন, “কবিতার বই খুঁজলেও সেখানে বৈচিত্র্য খুঁজছেন অনেক পাঠক।”

বইমেলায় কথা হয় কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেনের সঙ্গে। মেলা উপলক্ষে মৌসুমী লেখক ও প্রকাশকদের আত্মপ্রকাশে বইমেলার মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।

মোজাফফর হোসেন বলেন, “বইমেলার আসল সৌন্দর্য্য হল বই। সেই বইয়ের মান নিয়ে কোনো হেলাফেলা করা চলে না। অথচ এই বইমেলা উপলক্ষে দেখা যায় বেশ কয়েকজন মৌসুমী সাহিত্যিক, লেখক আর প্রকাশক আত্মপ্রকাশ করেন। এদের সারা বছরও দেখা মেলে না।

“এই মৌসুমী প্রকাশকরা বইমেলায় একেবারে মানহীন বইগুলো নিয়ে এসে পাঠকের সামনে তুলে ধরেন। অনেক পাঠক বিভ্রান্ত হয়ে সেসব বই কিনছে। এসব বইয়ের সম্পাদনাও বড় দুর্বল। এগুলোর কারণে প্রতি বছর মানহীন বইয়ের সংখ্যা একটি আতঙ্কেরও বিষয়।”

মোজাফফর হোসেন মনে করেন, মৌসুমী প্রকাশকদের বিষয়ে আরও ‘বেশি কঠোর হওয়া’ প্রয়োজন বাংলা একাডেমির।

এবার পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স থেকে এসেছে মোজাফফর হোসেনের প্রবন্ধ ‘দক্ষিণ এশিয়ার ডায়াসপার সাহিত্য’ ও উপন্যাস ‘তিমিরযাত্রা’।

গবেষক সৈয়দ জাহিদ হাসানের সম্পাদনায় আগামী প্রকাশনী থেকে ‘বঙ্গবন্ধু রচনাবলী’ প্রকাশিত হয়েছে।

তরুণ লেখকদের বিষয়ে তিনি বলেন, “অনেক চেনাজানা লেখকের চেয়ে তরুণদের অনেকে ভীষণ ভালো লিখছেন। তাদের বইয়ের প্রচারণার দরকার।”

উৎস প্রকাশনীর কর্ণধার মোস্তফা সেলিম বলেন, ‘মানহীন’ বই প্রকাশ নিরুৎসাহিত করতে কঠোর হতে হবে বাংলা একাডেমিকে।

“প্রতিদিন মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে অনেকগুলো নতুন বইয়ের নাম প্রচার হয়। পাঠকরা মেলায় ঢুকে সে নতুন বইগুলো সন্ধান করতে যান। যারা একটু বুঝদার পাঠক, তারা বইয়ের মান বিচার করে তবেই বই কেনেন।

“যখন তারা মানহীন বই দেখতে থাকেন স্টলে স্টলে, তখন বিরক্ত হয়ে বই না কিনে চলে যান। এটা মেলার জন্য বড় ক্ষতিকর। প্রকৃত পাঠক কখনও গাঁটের পয়সা খরচ করে মানহীন বই কিনবে না।”

মানসম্মত বই প্রকাশে প্রকাশকদেরও দায় রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।