রোববার রাতে নানকসহ আওয়ামী লীগের নেতারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে নূরের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হয় তাদের।
দুপুরে ডাকসু ভবনে ভিপির কক্ষে নূরসহ তার সহকর্মীদের উপর হামলা হয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই নূরদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
হামলায় আহত নূরসহ ২৮ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসা দিয়ে ১৪ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ১৪ জন এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর বলে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
রাত ৮টার দিকে নূরকে দেখতে ঢাকা মেডিকেলে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও ছিলেন।
নানকরা হাসপাতালে ঢোকার সময় পরিষদের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
আওয়ামী লীগ নেতাদের আসার খবর শুনেই নূরের সমর্থকরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সারিবদ্ধভাবে বসে পড়েন। নানকদের পথ আটকে বিচারের দাবি জানান তারা।
নানকের সঙ্গে থাকা নাছিম বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা নূরসহ আহতদের দেখতে এসেছি। তাদের চিকিৎসার খোঁজ নেব। এছাড়া তোমাদের এই অমানবিকভাবে কারা হামলা চালিয়েছে, তাদের খোঁজ নিয়ে চিহ্নিত করা হবে।”
এসময় বিক্ষোভকারী একজন চেঁচিয়ে বলেন, “হামলার ভিডিও গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। আপনারা দেখেছেন, কারা হামলা চালিয়েছে। তাদের আগে বিচার করুন।”
এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের পাশ কাটিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন নানকরা। নূরের কাছে গিয়ে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন তারা। আহত নূরের বাবাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সেখান থেকে বেরিয়ে নানক সাংবাদিকদের বলেন, “শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। আমরা শুনেছিলাম, তবে ঘটনাটা এত বর্বর ও পৈশাচিক হয়েছে, সেটা আমরা বুঝতে পারিনি।”
ছাত্রলীগের এক সময়ের নেতা নানক বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা, শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করা, এই সরকার গ্রহণ করবে না। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কোনো ব্যাপার না। কোন দুষ্কৃতকারীরা, কোন জায়গার নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করার জন্য, শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, সেটা দেখা হবে।”
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচির পর ডাকসু ভবনে গিয়ে নূরদের উপর হামলা হয়। ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীকেও এই হামলায় দেখা গেছে।
এই সংগঠনটির ব্যানারে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী সম্প্রতি ডাকসু ভবনে নূরের কক্ষে তালা দেওয়াসহ তার কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছিল।
নানক বলেন, “আমরা বলতে চাই, যে মঞ্চের নামেই গোলযোগ করা হোক না কেন, কাউকে বর্তমান সরকার রেহাই দেবে না। শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।”
ডাকসুর ভিপি নূরের উপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও নিন্দা জানিয়েছে। হাসপাতালে তাকে দেখতেও যান বিভিন্ন দলের নেতারা।
সন্ধ্যায় হাসপাতালে যান ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি নূর ও আহত অন্যদের খোঁজ-খবর নেন।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ডাকসু ভবনে হামলায় আহত হয়ে তাদের হাসপাতালে মোট ২৮ জন এসেছিলেন।
“আমরা মোট ২৮ জনের ট্রিটমেন্ট করেছি। তাদের মধ্যে ১৪ জনকে ইতোমধ্যে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। এখন ১৪ জন ভর্তি আছেন।”
আহতদের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এদের মধ্যে একজনের (তুহিন ফারাবি) শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল বিধায় তাকে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে।”