রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে নেদারল্যান্ডসের সহায়তা চাইলেন শেখ হাসিনা

নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব মাদ্রিদ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2019, 06:17 PM
Updated : 2 Dec 2019, 06:17 PM

সোমবার কপ-২৫ সম্মেলনে যোগ দিতে স্পেন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদ্রিদে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠককালে এ সহযোগিতা চান।

পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি করেছে, এর সমাধানও সেখানে। তারা (মিয়ানমার) কখনও বলে না রোহিঙ্গাদের নেব না, কিন্তু আন্তরিকতার অভাব আছে। আপনারা এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করুন।”

শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, “আগামী সপ্তাহে আপনার দেশে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে- আইসিজে) শুনানি হবে। সু চি (মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি) ওখানে আসবেন। তখন আপনাদের উচিৎ মিয়ানমারকে এই বিষয়ে বলা।”

রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনের উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। আগামী ১০-১২ ডিসেম্বর এ মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

মোমেন বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে উনি (শেখ হাসিনা) বলছেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের পরিবেশগত বিপর্যয় হয়েছে। ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকি এড়ানোর জন্য তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০২০ সালের অক্টোবরে ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন সামিট অনুষ্ঠিত হবে নেদারল্যান্ডসে। সেখানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান মার্ক রুট।

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কার্বন নির্গমন কমানোর উপর জোর দেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী।

মোমেন বলেন, “মার্ক রুট বলেছেন যে কার্বন নিঃসরণটা আরও কমানো দরকার দুনিয়াজুড়ে। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আমরা তো নিঃসরণকারীই না, অন্যদের কারণে আমাদের সমস্যা হচ্ছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। আমাদের অনেক এলাকা পানির নিচে চলে যাবে। ইতোমধ্যে পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। নদী ভাঙন হচ্ছে। এর ফলে বহু লোক নিজের বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “মার্ক রুট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান, বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজনের জন্য কী করছে? তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অনেক বছর থেকে আমরা অভিযোজনের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আগে অনেক লোক মারা যেত, এখন আর যায় না।”

আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা, ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুতসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন বলে জানান মোমেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্যোগ মোকাবেলায় আমার ইচ্ছে আগামীতে আরও অনেক বাঁধ উঁচু করব। আপনারা এ ব্যাপারে যদি আমাদের সাহায্য করেন। বনায়ন করা হয়েছে। আর মুজিব বর্ষে নিয়মিত বৃক্ষায়নের পাশাপাশি ১০ মিলিয়ন গাছ লাগানো হবে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকীতে আসার জন্য মার্ক রুটকে দাওয়াত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।