গ্রামীণফোন নিয়ে বিটিআরসির আবেদনের শুনানি নিয়মিত আপিল বেঞ্চে

গ্রামীণফোনের কাছ থেকে বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা আদায়ে হাই কোর্টের দেওয়া দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা স্থগিতে সাড়া দেয়নি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2019, 01:29 PM
Updated : 21 Oct 2019, 01:29 PM

হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) করা আবেদনে সাড়া না দিয়ে চেম্বার বিচারক মো. নুরুজ্জামান সোমবার আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রেখেছেন।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আগামী ২৪ অক্টোবর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। ওইদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আবেদনটির শুনানি হবে।

হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত চেয়ে রোববার চেম্বার আদালতে আবেদন করে বিটিআরসি।

চেম্বার আদালতে বিটিআরসির আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবে আলম ও খন্দকার রেজা-ই রাকিব। গ্রামীণফোনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন ও শেখ ফজলে নূর তাপস।

রেজা-ই রাকিব সাংবাদিকদের বলেন, “গ্রামীণফোনের কাছ থেকে প্রায় ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে হাই কোর্টের দেওয়া দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত চেয়ে গতকাল চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিলাম। আবেদনটি না শুনেই চেম্বার বিচারপতি আগামী ২৪ অক্টোবর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।”

গ্রামীণফোনের আপিলে গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি একেএম আবদুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের হাই কোর্ট বেঞ্চ গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির ১২ হাজার ৫শ ৮০ কোটি টাকা পাওনা আদায়ের ওপর দুই মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেয়।

আগামী ৫ নভেম্বর গ্রামীণের আপিল আবেদনটি শুনানির জন্য রেখেছে হাই কোর্টের এই বেঞ্চ।

গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিটিআরসি।

কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে নোটিস পাঠানো হয়েছে দুই অপারেটরকে।

বিটিআরসির দাবি করা টাকার ওই অঙ্ক নিয়ে আপত্তি রয়েছে গ্রামীণফোন ও রবির।

সালিশের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয় দুই অপারেটর। তবে পরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের উদ্যোগে বিষয়টি নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠকও করেন।

এরপর নিম্ন আদালতে টাইটেল স্যুট (স্বত্তের মামলা) মামলা করে গ্রামীণফোন। ওই টাইটেল স্যুট মামলাটি আদালত গ্রহণ করে। ওই টাইটেল স্যুটের অধীনেই গ্রামীণফোন বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে, যা গত ২৮ অগাস্ট নিম্ন আদালত খারিজ করে দেয়।

নিম্ন আদালতের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে পরে হাই কোর্টে আপিল করে গ্রামীণফোন।

সে আপিলটি গ্রহণ করেই বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আপিলটি শুনানির জন্য রেখেছে হাই কোর্ট।

সালিশ হবে না

সালিশকারী নিয়োগ চেয়ে গ্রামীণফোনের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।

সোমবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ থেকে এ আদেশ আসে।

ফলে গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির কোনো সালিশ হবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আদালতে গ্রামীণফোনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া ও তানিম হোসেইন শাওন।  বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।

শরীফ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৯৬ সালে গ্রামীণফোন যখন বিনিয়োগ করে তখন বিটিআরসির সাথে করা চুক্তিতে সালিশের শর্ত ছিল। বিটিআরসি পরে একতরফাভাবে ওই শর্তটি বাতিল করে দেয়। গ্রামীণফোনের অবস্থান হচ্ছে বিটিআরসি একতরফাভাবে তা বাতিল করতে পারে না।

তিনি বলেন, “নিরীক্ষা (অডিট) নিয়ে বিরোধটা সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে গত জুলাইয়ে সালিশকারী নিয়োগের জন্য একটা দরখাস্ত করে গ্রামীণফোন। আজ সে আবেদনটিই খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

“ফলে বিটিআরসি ওই শর্ত বাতিলের সিদ্ধান্তটি বৈধ। এখন কোনো সালিশি চুক্তি নাই। কাজেই কোনো সালিশ হবে না।”