বৃহস্পতিবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি।
সভায় মূল প্রবন্ধে নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “রোহিঙ্গাদের ত্রাণের নামে ব্যবহার করছে জামায়াত-শিবিরসহ কিছু এনজিও। তারা দু’হাতে টাকা ছড়াচ্ছে। ক্যাম্পগুলোকে কেন্দ্র করে চোরাচালান বেড়েছে, এর সঙ্গে রোহিঙ্গারা জড়িত হয়ে পড়ছে।”
জামায়াতসহ কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরে যেতে নিরুৎসাহিত করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
শাহরিয়ার কবির বলেন, “কক্সবাজারে মাত্র ২১০০ পুলিশ দিয়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে ঘিরে রাখা সম্ভব না। এ বিষয়ে সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
“কারণ নির্মূল কমিটির নাগরিক কমিশন ১০ হাজার রোহিঙ্গার বক্তব্য ইতোমধ্যে রের্কড করেছে, যাতে রোহিঙ্গারা বলেছে, তারা এ দেশে জিহাদ করবে। এ দেশ থেকে যাবে না।”
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, “রোহিঙ্গাদের কারণে অনেক এনজিও আর্থিক স্বার্থ ভোগ করছে। এ জন্য তারা চাইছে রোহিঙ্গারা এ দেশে থাকুক। এর সঙ্গে রাজনৈতিক স্বার্থও রয়েছে।”
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন, তাতে সকলকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। এই সমস্যার সমাধান যদি দ্রুত না হয় তাহলে বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে।
“কারণ বাংলাদেশে এখন জঙ্গিবাদও প্রকট হয়ে উঠেছে। তাই রোহিঙ্গারা যাতে অস্ত্র তুলে না নেয় সেদিকেও সর্তক রেখে দ্রুত তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি মহল ‘চক্রান্ত’ করছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
“তাছাড়া মানবতার দোহাই দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেসব এনজিও নেতিবাচক কর্মকাণ্ড করছে, তাদের বিরুদ্ধেও সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। কারণ কিছু এনজিওর কর্মকাণ্ড দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হস্তক্ষেপের শামিল।”
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক তদারকির উপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দেশে ফিরে যেতে চাইছে না। তারা সেখানে গিয়ে আবারও অত্যাচারিত হবে, এটাও আমরা চাই না। সে জন্য সরকার রোহিঙ্গাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই দেশে ফেরত পাঠাতে সচেষ্ট রয়েছে।
“জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক টিমের তদারকির মাধ্যমে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। শুধু রোহিঙ্গাদেও মিয়ানমার সরকার নিয়ে গেল, তার মধ্যেই বাংলাদেশ সরকার তার দায়িত্ব শেষ করতে চায় না।”
'রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : সরকার, নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয়' শীর্ষক এই আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধু জুলিয়ান ফ্রান্সিস, বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি অশোক বড়ুয়া, তুরিন আফরোজ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ বক্তব্য রাখেন। এর সঞ্চালনায় ছিলেন নির্মূল কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আসিফ মুনীর তন্ময়।