অন্যথায় ধর্মঘটের পর আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
গত ২ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবর ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয় সংগ্রাম পরিষদ।
ধর্মঘটের সমর্থনে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মতবিনিময় সভা করে সংগঠনটি। পরে মালিক-শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে কদম ফোয়ারা ঘুরে পুরানা পল্টন হয়ে আবার প্রেস ক্লাবের সামনে আসেন।
মিছিলের আগে সমাবেশে সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক বরকত উল্লাহ ভুলু বলেন, “আমাদের নয় দফার অন্যতম দাবি হল পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এটাকে আমি এক নম্বর দাবি মনে করি।”
“(পুলিশ) প্রতিটি বৈধ গাড়িতে ২০ থেকে ২৫টি করে মামলা থাকে। প্রতি মাসে এক একটা গাড়ি থেকে পুলিশকে হাজার হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। তা বন্ধ করতে হবে।”
এছাড়া মহানগরীর আশপাশের জেলা থেকে আসা অটোরিকশা এবং প্রাইভেট অটোরিকশার বাণিজ্যিক চলাচল বন্ধ করারও দাবি জানান তিনি।
সরকারকে নয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বরকত উল্লাহ ভুলু বলেন, “ধর্মঘটের আগে আরও দুই দিন সময় বাকী আছে, আমরা প্রত্যাশা করি সরকারের যদি টনক নড়ে তাহলে আমাদের সাথে বসে যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিবে। আরা না হয় ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট পালনের পর আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”
অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকদের নয় দফা দাবিকে যৌক্তিক উল্লেখ করে সমাবেশে ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরীর সভাপতি শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইন বলেন, “আপনারা কোনো ব্যাংক লুট করেননি, অথবা কোনো ঋণ খেলাপিও নন। তাই আপনাদের কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই।
“আপনাদের দাবি গণমানুষের দাবি। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না।”
মালিক-শ্রমিকদের নয় দাবি
>> ঢাকা মহানগরীসহ ঢাকা জেলা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জে অবৈধ অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে হবে।
>> ‘প্রাইভেট’ অটোরিকশার বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
>> সুনির্দিষ্ট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না করে ‘নো পার্কিং’ মামলা ও ডাম্পিং করা যাবে না। এসএস স্টিলের গ্রিল বাম্পার রং করার নামে মামলা এবং ভিডিও/গায়েবি মামলাসহ অন্যায়ভাবে কোনো মামলা বা রেকারিং করা যাবে না।
>> রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের অনুমোদনবিহীন সকল মোটর সাইকেল ও প্রাইভেটকারের বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের চালকদের নির্দিষ্ট পোশাক, পেশাদারি লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং প্রতি কিলোমিটার ভাড়া নির্ধারণ ও সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সিলিং সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। রাইড শেয়ারিংয়ের গাড়ি চিহ্নিত করার জন্য নির্দিষ্ট রঙয়ের স্টিকার লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের অনুমোদনপ্রাপ্ত গাড়ির তালিকা ট্রাফিক পুলিশের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
>> ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চার বার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চালকের ব্যয় বৃদ্ধি হওয়ায় ভাড়ার মিটারে প্রথম দুই কিলোমিটার ৮০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটার ৩০ টাকা এবং ওয়েটিং চার্জ প্রতি মিনিট চার টাকা এবং মালিকের দৈনিক জমা আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করতে হবে। চালক মিটারের ভাড়া বৃদ্ধি ও মালিকের দৈনিক জমা বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত মিটার ও জমা সংক্রান্ত কোনো মামলা করা যাবে না।
>> সরকারের নির্ধারিত দৈনিক জমার নিয়ম বাস্তবায়ন করা এবং ‘অন্যায়ভাবে চালিত’ শিফটিং প্রথা বাতিল করতে হবে।
>> শুধু সরকার নির্ধারিত ফির বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া বা নবায়ন করতে হবে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক পরীক্ষা/রি-টেস্টিংয়ের নিয়ম বাতিল করে শ্রমিক হয়রানি বন্ধ ও উৎকোচ নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
>> গাড়ি চোর, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারী, চালক হত্যা বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
>> অটোরিকশাকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা করতে হবে।
>> গ্রাহক সেবায় বিআরটিএ কর্তৃক গড়িমসি ও গ্রাহক হয়রানি বন্ধ করতে হবে।