বুয়েট প্রশাসনের ‘নির্লিপ্ততা-নিষ্ক্রিয়তার পরিণতি’ আবরার হত্যা: শিক্ষক সমিতি

একের পর এক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা-নিষ্ক্রিয়তার পরিণতিতে আবরার ফাহাদকে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে মনে করছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2019, 01:48 PM
Updated : 10 Oct 2019, 03:59 PM

এর জন্য উপাচার্য সাইফুল ইসলামকে দায়ী করে অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার আবরার হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমাবেশে এসে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় গৃহীত এই সম্মিলিত বক্তব্য তুলে ধরেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ।

ওই সভার কার্যবিবরণী পড়ে শুনিয়ে তিনি বলেন, “ইতোপূর্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দীর্ঘদিনের নির্লিপ্ততা, নিষ্ক্রিয়তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আবাসিক হল সমূহে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উপাচার্যের ধারাবাহিকভাবে অবহেলা ও ব্যর্থতা আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের সাহস জুগিয়েছে বলে সভা মনে করে।”

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে অধ্যাপক মাসুদ বলেন, “ব্যর্থতার কারণে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম উপাচার্য পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে বুয়েটের উপাচার্য পদ হতে পদত্যাগ করার জন্য সভা অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বুয়েটের সামনের সড়কে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থান। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

”উপাচার্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে তাকে অবিলম্বে দায়িত্ব হতে অপসারণের জন্যে বুয়েট শিক্ষক সমিতি সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে।”

একটি ফেইসবুক পোস্টের জন্য বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে রোববার রাতে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী শেরে বাংলা হলের একটি কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারসহ কয়েকটি দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তাদের সমাবেশে বক্তব্যে উপাচার্যের পদত্যাগের পাশাপাশি ছাত্র-শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি বন্ধসহ ছয়টি দাবি তুলে ধরেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি।

বুয়েট শিক্ষক সমিতির সাত দফা

>> আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকলকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

>> বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবরারের পরিবারকে মামলা পরিচালনায় প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান।

>> আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কার।

>> বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো হতে সকল অবৈধ রুম দখলকারীদের বিতাড়িত করে হলের সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃংখলা নিশ্চিত করা।

>> একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অতীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর সংঘটিত বিভিন্ন নির্যাতন এবং র‌্যাগিংয়ের তথ্য বুয়েট ইনস্টিটিউশনাল ইনফরমেশন সিস্টেমের (বিআইআইএস) মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনলাইনে সংগ্রহ করে দোষীদের শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান।

>> শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রাজনৈতিক দল ভিত্তিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা।

>> ধারাবাহিক ব্যর্থতার জন্য উপাচার্যের পদত্যাগ।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বুয়েটের শিক্ষার্থীদের পথনাটক। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

বুধবার অনুষ্ঠিত ওই সভায় হলের প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্টসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ আবাসিক হলগুলাতে ঘটা নির্যাতন ও র‌্যাগিংয়ের নানা ঘটনা এবং বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন বলে উল্লেখ করেন সমিতির সভাপতি।

“তারা হলগুলোতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে রুম দখল করে রাখা, রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয় স্থাপন করা, ছাত্র নেতাদের রুমে এসি লাগানো এবং হলগুলোতে মাদকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন।”

এসব ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে প্রাক্তন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার ও উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি অভিযোগ উঠে ওই সভায়।

সভার কার্যবিবরণীতের আরো বলা হয়, “একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে বুয়েট ব্যর্থ হওয়ায় বুয়েট শিক্ষক সমাজ আবরার ফাহাদের পরিবারসহ দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”