আত্মজীবনী লেখায় অনীহা শেখ হাসিনার

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে যখন অনেকেই প্রেরণা খুঁজে পাচ্ছেন, তখন দীর্ঘতম সময় দেশ শাসন করলেও আত্মজীবনী লেখায় অনীহা শেখ হাসিনার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2019, 04:32 PM
Updated : 9 Oct 2019, 06:58 PM

রাজনৈতিক ব্যস্ততার মধ্যেও কয়েকটি বই ইতোমধ্যে লিখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। লেখালেখির সেই চর্চায় বন্ধু বেবী মওদুদ ছিলেন সঙ্গী।

বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আত্মজীবনী লেখায় অনীহার কথা জানানোর সঙ্গে বেবী মওদুদকে হারানোর বেদনার সুরও ছিল শেখ হাসিনার কণ্ঠে।

জাতিসংঘ ও ভারত সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে লেখক-সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, “পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী লিখবেন কি না?”

উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “আত্মজীবনী-টিবনী লেখার খুব একটা ইচ্ছে আমার নেই। এই কারণেই নেই যে বাংলাদেশে আমি কী লিখব, আর কেনইবা লিখব?”

পঁচাত্তর ট্রাজেডির পর প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা; লড়াই করে তার এই পথচলা থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার কথা সম্প্রতি জানিয়েছেন ভারতের প্রায় এক যুগের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাতনী প্রিয়াংকা গান্ধী।

৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করে চলা শেখ হাসিনা সবমিলিয়ে ১৫ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলাচ্ছেন।

রাজনীতির পাশাপাশি শেখ হাসিনার লেখা ও সম্পাদনা করা বইয়ের সংখ্যাও দুই ডজনের বেশি। এর মধ্যে রয়েছে শেখ মুজিব আমার পিতা, সামরিক বনাম গণতন্ত্র, ওরা টোকাই কেন, বিপন্ন গণতন্ত্র, সাদা কালো, স্বৈরতন্ত্রের জন্ম।

এই লেখালেখিতে চলে আসে বেবী মওদুদের কথা।

শেখ হাসিনা-বেবী মওদুদ: বন্ধুত্ব অমলিন

শেখ হাসিনা বলেন, “আসলে আমি লেখক না। আপনারা জানেন যে, আমার বান্ধবী বেবী মওদুদ। আমরা সেই ইউনিভার্সিটি থেকে একসঙ্গে পড়ি।

“মাঝেমধ্যে একটা কিছু লিখতাম। ও (বেবী মওদুদ) এসে দেখত। দেখেই বলত, এটা শেষ করতে হবে। অনেকটা বলতে গেলে, ওর কারণেই কিন্তু…. হয়ত আমি লিখে রেখে দিয়েছি একটা। কোনো একটা বিষয় দেখলাম, লিখলাম। সে ওটা সাথে সাথে নিয়ে যেত।

“আসলে আমার লেখাগুলি সংগ্রহ করে করে সে বই ছাপাত। ওইভাবেই লেখাগুলি কিন্তু এসেছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক সময় ও (বেবী মওদুদ) নিয়মিত ফিচার লিখত। সেটা আবার আমাকে দিত দেখতে। আমি হয়ত বলতাম এটা হবে না, ওভাবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে একসঙ্গে পড়েছেন শেখ হাসিনা ও বেবী মওদুদ। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী প্রকাশের ক্ষেত্রেও ভূমিকা ছিল বেবী মওদুদের

ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালে মারা যান বেবী মওদুদ। তখন তিনি ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সোশাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর।

নিয়মিত না লিখলেও মাঝে মধ্যে কেউ যদি লেখা চায়, তৎক্ষণাৎ লিখে দিতে পারার কথা জানান শেখ হাসিনা।

এখন কাজকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি কাজ করে যাচ্ছি দেশের জন্য। কেন করে যাচ্ছি? করি একটাই কারণে। আমার বাবা এই দেশটা স্বাধীন করেছেন। উনার খুব স্বপ্ন ছিল, খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল এই দেশটাকে নিয়ে, মানুষগুলিকে নিয়ে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এত কষ্টে ছিল, এত দুঃখে ছিল। উনি সবসময় চাইতেন যে, এই মানুষদের জীবনটাকে পরিবর্তন করে উন্নত জীবন দিতে।”

১৯৭৫ সালে সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেসময় বিদেশে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। 

“আমার মত যারা এইরকম সর্বহারা হয়, তাদের তো কাজ করার মতো মানসিকতা থাকে না,” মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে সাম্প্রতিক সফরের বিষয় জানাতে বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ইয়াসিন কবির জয়

তিনি বলেন, “আমি ওই একটা জিনিস নিয়ে (দেশে) এসেছি যে, আমার আব্বার যে স্বপ্নটা ছিল, দেশের মানুষকে ভালো জীবন জীবন দিয়ে যাবে, দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করবে, তাদের জীবনটাকে অর্থবহ করবে। আমি কিন্তু ওই একটা চিন্তা করেই কাজ করে যাচ্ছি।

“আমার কোনো স্মৃতি থাকুক বা আমার কথা কেউ মনে রাখুক, ওটা নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই।”

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাকে নিয়ে মিথ্যাচারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যিনি সারাটা জীবন ত্যাগ করে একটা দেশ দিয়ে গেলেন। অথচ এমন একটা সময় আসল যে, সেই নামটা মুছে ফেলা হল। মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হল। এমন এমন মিথ্যা অপবাদ, যা একেবারে ভিত্তিহীন। শুধু মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। আমার একটা… ছিল তার একটা জবাব দিয়ে দেওয়া। আর সেই সাথে সাথে তিনি যেটা করতে চেয়েছিলেন, সেই কাজটা করে দিয়ে যাওয়া।

“এই যে দিনরাত পরিশ্রম করি, বললেন যে সব আমাকেই করতে হয়। আমাকে কেউ বলে দেয় না যে, আমাকে করতে হবে। আমি আমার নিজের মনের তাগিদ থেকে করি।”

শেখ হাসিনা তার পারিবারিক শিক্ষার কথা উল্লেখ করে বলেন, “ওই একটাই চিন্তা। আমার বাবা যখন কাজ করেছেন। আমার মা তো কিছু চাননি। নিতান্ত সাদাসিদে জীবন-যাপন করে গেছেন এবং সবসময় বাবার পাশে থেকেছেন।

“পাশাপাশি দেখেছি আমার দাদা-দাদিকে। এরকম বাবা-মা পৃথিবীতে খুব কম লোক পেতে পারে যে, বাবা-মা বলে নাই যে, ছেলে বড় করছি। ছেলেকে লেখাপড়া শেখালাম, পয়সা কামাই করতে হবে। আমাদের চালাবে- তা নয়। উল্টো ছেলের কী লাগবে।”

“কাজেই আমার লেখারও ইচ্ছা নাই, চিন্তাও নাই,” বলেন শেখ হাসিনা।