উপজেলা পরিষদে এমপিদের উপদেষ্টা থাকা প্রয়োজন: তাজুল

আইন প্রণেতাদের হস্তক্ষেপকে বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করলেও সংসদ সদস্যদের পক্ষেই বললেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2019, 06:40 PM
Updated : 11 Sept 2019, 06:40 PM

উপজেলা পরিষদে উপদেষ্টা হিসেবে সংসদ সদস্যদের রাখা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বুধবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “আমি বুঝলাম না সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে কাজ করলে অসুবিধা কোথায়?

“সংসদ সদস্যরা এলাকার মানুষের দেখভাল করেন, কারণ তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। সংসদ সদস্যরা উপদেষ্টা থাকলে এলাকার কাজের মান বাড়ে। তারা থাকলে শিক্ষার মান বাড়ে, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন হয়।”

বিএনপির রুমিন ফারহানার প্রশ্নের জবাবে উপজেলা পরিষদে সংসদ সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে যুক্তি হিসেবে একথা বলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

আইনপ্রণেতারা তাদের কাজের পরিধির বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে বরাবরই হস্তক্ষেপ করেন বলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ।

উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানদের অভিযোগ, নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের জন্য সংসদ সদস্যদের বরাদ্দ থাকার পরও তারা তাদের বরাদ্দে ভাগ বসান।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সংসদ সদস্যদের কাজ আইন প্রণয়ন করা। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ স্থানীয় সরকারের কাজ তাদের  নয়। তাদের সেই কাজে সম্পৃক্ত করা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে অন্তরায়।

তবে এর বিপরীতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্যরা বলে আসছেন, এলাকায় উন্নয়ন কাজ ঠিকভাবে না হলে তার জন্য জনগণের কাছে তাদেরই জবাবদিহি করতে হয় বলে তাদের সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন।

রুমিন ফারহানার প্রশ্ন ছিল, “উপজেলা আইনে সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা করে রাখা হয়েছে। এটি সংবিধানের ৫৯ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আইন সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা পদ বাদ দেওয়া হবে কি না?”

স্থানীয় সরকার নিয়ে সংবিধানের ৫৯ ধারায় বলা আছে- “আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।”

রুমিনের প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল বলেন, “আমি মনে করি উপজেলায় সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা থাকাটাই বাঞ্ছনীয়।”

তাজুল ইসলাম

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ‘পানি সরবরাহে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্প’–এর আওতায় আর্সেনিক দুষণযুক্ত এলাকায় ২ হাজার ৩৯০টি রিংওয়েল বসানো হবে। প্রতিটি রিংওয়েল বসানোর জন্য ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে ‘সহায়ক চাঁদা’ নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী তাজুল বলেন, সিটি করপোরেশনগুলোকে মশা নিধন ও পরিচ্ছন্নতা খাতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি সাড়ে ৭ কোটি টাকা করে; চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি ১ কোটি করে এবং খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি ৫০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ পেয়েছে।

মামুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর সকল পাইপ লাইন পরিবর্তন করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিএমএ (ডিস্ট্রিক্ট মিটারড এরিয়া) পদ্ধতি চালু করেছে। এর ফলে রাজধানীর কোথাও কোথাও পানির অপচয় ৫-৭ ভাগে নেমে এসেছে, যা আগে ৪০ ভাগ ছিল।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্পের কাজ প্রায় ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশের শতকরা ৮৭ ভাগ মানুষ নিকটবর্তী উৎস হতে নিরাপদ পানি সংগ্রহ করে। বর্তমানে নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য ৮ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১টি প্রকল্প চালু রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় ৪০ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৪৫টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে।”

হাজী সেলিমের প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা ওয়াসার দৈনিক পানি উৎপাদন ক্ষমতা ২৫৫ কোটি লিটার। এর বিপরীতে চাহিদা ২২৫–২৪৫ কোটি লিটার।