রাজধানীতে অনেকটা নিয়মিত বিরতিতে তিনটি বোমা হামলা এবং দুইটি হামলার চেষ্টা ঘটেছে, যার প্রতিটিতে পুলিশকেই লক্ষ্য করা হয়েছে বলে দাবি বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের।
পুলিশের দু’টি শাখা এসব হামলার ঘটনা তদন্ত করছে। কিন্তু যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে এখনও চিহ্নিতই করা যায়নি। ফলে তদন্তও প্রাথমিক পর্যায়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে গড়ে তোলা পুলিশের বিষেশায়িত শাখা অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তদন্ত যারা করছেন তাদের কাছে কোনো না কোনো তথ্য আছেই।
“পুলিশের ওপর এভাবে হামলার বিষয়টি নতুন। ফলে তদন্তে একটু সময় লাগছে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বের করা অসম্ভব কিছু নয়।”
ঢাকায় এ বছর প্রথম বোমা হামলার ঘটনাটি ঘটে ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে। ওই সময় বোমা বিস্ফোরণে ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম, লিটন চৌধুরী ও কমিউনিটি পুলিশ সদস্য মো. আশিক আহত হন৷
এরপর ২৬ মে মালিবাগে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) কার্যালয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা পুলিশের গাড়িতে বোমার বিষ্ফোরণ ঘটলে এসআই রাশেদা খাতুন এবং এক রিকশাচালক আহত হন।
সবশেষ ঘটনাটি ঘটে গত ৩১ অগাস্ট মধ্যরাতে; স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের যাত্রাপথে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে একজন এএসআই এবং একজন কনস্টেবল আহত হন।
প্রতিটি ঘটনার পরই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের পক্ষ থেকে হামলার দায় স্বীকারের খবর গণমাধ্যমে এলেও পুলিশ তা বরাবরই নাকচ করে আসছে।
সবকটি হামলার ঘটনার পর পুলিশ সদর দপ্তর এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। গত বুধবারও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এবং অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, প্রতিটি ঘটনার বোমার আলামত ছাড়া পুলিশের কাছে উল্লেখ করার মতো কোনা আলামত নেই বলে বুধবারের বৈঠকে জানানো হয়। একটি ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেলেও তা অস্পষ্ট। বিশেষ করে, ঘটনাটি রাতে হওয়ায় ফুটেজ দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই।
‘নিম্নমানের’ বোমা
এ পর্যন্ত পুলিশ যেসব আলামত সংগ্রহ করেছে সেসব পরীক্ষায় বোমাগুলোকে ‘নিম্নমানের’ মনে হয়েছে পুলিশ কর্মকর্তাদের।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাউন্টার টেররিজমের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, তারা এখনও নিশ্চিত নন, বোমাগুলো দূরনিয়ন্ত্রিত ছিল, নাকি ছুঁড়ে মারা হয়েছে। তিনিও বোমাগুলোকে নিম্নমানের বলেছেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানও বলেন, “খেলনা টাইপের এসব বোমা অত্যন্ত নিম্নমানের। এরপরও পুলিশ গুরুত্বের সাথে কাজ করছে।”
কোথায় দাঁড়িয়ে তদন্ত
ঢাকার প্রতিটি বোমা হামলার পরপর তদন্ত শুরুর কথা পুলিশ বললেও অগ্রগতি যে প্রাথমিক পর্যায়ে আটকে আছে, তা সবশেষ ঘটনার পর কর্মকর্তাদের কথাতেই স্পষ্ট।
সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বোমা হামলার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার বিদায়ী পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠি এই হামলা চালিয়েছে।
আগের চারটি ঘটনার তদন্তে অগ্রগতি হওয়ার কথা জানালেও তদন্ত এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে তা বলা যাবে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
আর কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম দু’দিন আগে সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, এসব ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সেটিও তারা গুরুত্বের সাথে দেখছেন।
এসব ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামানও।
তিনি বলেন, “নানামুখি তদন্ত চলছে। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা খোঁজা হচ্ছে, সেই সাথে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আছে কিনা সেটাও তদন্তের মধ্যে রয়েছে।”
সায়েন্স ল্যাবরেটরি ঘটনার মামলার তদন্ত সহায়ক কমিটির সদস্য কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রতিটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।
“এসব ঘটনার পর যা যা প্রয়োজন সবকিছুই করা হচ্ছে। পাশপাশি পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।”
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, অপরাধীরা সহসাই ধরা পড়বে এবং তা আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
আরও খবর